জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল: বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের এক মাইলফলক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (এনআইএমএইচ) বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় একটি অগ্রণী ও বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল। ১৯৮১ সালে 'ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড রিসার্চ' নামে প্রতিষ্ঠিত হলেও, ২০০১ সালে বর্তমান নাম ও শেরেবাংলা নগরে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। এটি শুধুমাত্র চিকিৎসা প্রদানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গবেষণা, নীতিমালা নির্ধারণ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ইতিহাস:
প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও, পরবর্তীতে স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে ১৯৮৬ সালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এবং ১৯৯৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে ২০০১ সালে শেরেবাংলা নগরে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয় এবং ৪০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়।
সেবা:
এনআইএমএইচ বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে- বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ওসিডি, শিশু-কিশোরদের মানসিক রোগ, বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, মাদকাসক্তি, এবং অন্যান্য। প্রতিদিন ২৫০-৩০০ জন বহির্বিভাগ রোগী এবং ৪০০ এর অধিক ভর্তি রোগী এখানে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এছাড়াও, বিশেষায়িত ক্লিনিকের মাধ্যমে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করা হয়।
মানব সম্পদ:
প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন শতাধিক ডাক্তার, সাইকোলজিস্ট, নার্স, এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কর্মরত রয়েছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:
২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার গ্রেপ্তারের পর ডাক্তার ও কর্মীদের ধর্মঘটের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি এনআইএমএইচ নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে যেমন- এডিকশন সাইকিয়াট্রি ওয়ার্ড, সম্প্রসারিত জরুরি বিভাগ, এবং কম খরচে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষদের সেবা প্রদানের উদ্যোগ।
সাম্প্রতিক কর্মসূচী:
এনআইএমএইচ নিয়মিতভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ আয়োজন করে। এছাড়াও বিভিন্ন দিবস যেমন বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, জাতীয় শোক দিবস ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দিবস পালন করে থাকে।
উপসংহার:
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অপরিসীম অবদান রাখছে। এর সুসজ্জিত অবকাঠামো, দক্ষ জনবল এবং নিয়মিত নতুন উদ্যোগ দেশের মানসিক স্বাস্থ্য সেবাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে বলে আশা করা যায়।