জনসংখ্যা

বাংলাদেশের জনসংখ্যা: একটি বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, তার প্রভাব এবং দেশের উন্নয়নে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এখানে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৫৬৬%। ১৯৯১ সালে এটি ছিল ১১১.৫ মিলিয়ন, যা ২০০১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩০.৫ মিলিয়নে। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা কঠিন, কারণ ২০০৮ সালে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬০ মিলিয়ন, ২০১০ সালে World Population Reference অনুসারে ১৬৪ মিলিয়ন এবং ২০১১ সালের প্রাথমিক আদমশুমারির ফলাফলে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪২ মিলিয়ন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় স্থির, কারণ জন্ম ও মৃত্যুহার ছিল প্রায় সমান। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং প্রাণঘাতী রোগ ছিল এর কারণ। ১৯২১ সালের পর থেকে মৃত্যুহার কমে এবং প্রজনন হার বেড়ে যায়, ফলে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রজনন হার কমতে শুরু করে, কিন্তু এখনও তা উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।

ধর্ম ও জাতিগত বিভাজন:

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা (৯৮%) বাঙালি, বাকিরা (২%) আদিবাসী ও অবাঙালি মুসলমান। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ৮৯.৭% মুসলিম, ৯.২% হিন্দু, এবং বাকিরা অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। ১৯০১ সাল থেকে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৪৭-১৯৫১ ও ১৯৬১-১৯৭১ সালের মধ্যে দেশ বিভাগ এবং মুক্তিযুদ্ধের কারণে হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত কমে গেছে। আদিবাসী জনসংখ্যা ২০০১ সালে ছিল প্রায় ১.৪ মিলিয়ন (১.১৩%), যা পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ঘনত্বে বসবাস করে।

জনসংখ্যা ঘনত্ব:

২০১১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৬৪ জন। ১৯০১ সালে এটি ছিল ১৯৬ জন। জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বয়স ও লিঙ্গ বিভাজন:

২০০১ সালে, ৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৬%। ১৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৯.৩%। প্রজননক্ষম মহিলাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

২০০১ সালে ৭ বছর ও তার বেশি বয়সীদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫.৩২%, পুরুষদের ৫০% এবং নারীদের ৪১%। মৃত্যুহার কমেছে, কিন্তু শিশু মৃত্যুহার এখনও উদ্বেগের।

নগরায়ণ:

১৯৬১ সাল থেকে নগরায়ণের প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছে। ২০০১ সালে, জনসংখ্যার প্রায় ২৩% শহরাঞ্চলে বসবাস করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী হলো সবচেয়ে জনবহুল শহর।

জনসংখ্যা নীতি:

বাংলাদেশ সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী। ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি একটি কর্মসূচি চালু করে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলির সহায়তায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। গর্ভধারণ ও মৃত্যুহার কমানোর প্রচেষ্টা চলছে।

জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ:

গর্ভধারণের হার ২.২-২.৩ পর্যায়ে পৌঁছালে তা বাংলাদেশের জনসংখ্যার জন্য প্রতিস্থাপন হার হবে। তবে, জনসংখ্যার অধিকাংশ যুবাবয়সী বলে প্রতিস্থাপন হার অর্জনের পরও জনসংখ্যার আকার ও কাঠামো স্থিতিশীল হওয়ার পূর্বপর্যন্ত আরও ৪০-৫০ বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বৃদ্ধ জনসংখ্যা, প্রজননক্ষম মহিলাদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়িত আয়ুষ্কাল ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দিতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫৮ মিলিয়ন।
  • জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৫৬৬%।
  • অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত জনসংখ্যা স্থির ছিল।
  • ১৯২১ সালের পর থেকে মৃত্যুহার কমে ও প্রজনন হার বেড়ে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • ২০০১ সালে ৮৯.৭% মুসলিম ও ৯.২% হিন্দু ছিল।
  • ২০১১ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৯৬৪ জন।
  • ২০০১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫.৩২%।
  • সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।