চোরাচালান: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি অন্ধকার দিক
চোরাচালান বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। এটি একটি বেআইনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রম যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়কে হ্রাস করে। শুল্ক আইন ১৯৬৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এ চোরাচালানের আইনি সংজ্ঞা ও শাস্তির বিধান রয়েছে। চোরাচালানকারীরা সীমান্তের আইন-নির্দিষ্ট পথ এবং শুল্কঘাটি এড়িয়ে পণ্য আমদানী বা রপ্তানী করে। এদের মধ্যে অন্যতম হলো সোনা, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র-শস্ত্র, এবং অন্যান্য নিষিদ্ধ পণ্য।
সোনার চোরাচালান:
বাংলাদেশে সোনার চোরাচালান একটি প্রধান সমস্যা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিমানযাত্রীরা প্রায়শই সোনার বিস্কুট চোরাচালান করে। ঢাকা বিমানবন্দরে বারবার বৃহৎ পরিমাণে সোনার চোরাচালান ধরা পড়েছে। অনেক নেপালী নাগরিক এবং বিমান কর্মীরাও এতে জড়িত থাকে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত চোরাচালানের একটি প্রধান রুট।
মাদকদ্রব্যের চোরাচালান:
মারিজুয়ানা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ইত্যাদি মাদকদ্রব্যের চোরাচালান একটি বড় সমস্যা। ভারত থেকে ফেনসিডিলের চোরাচালান বিশেষ করে উদ্বেগজনক। ১৯৮০-এর দশক থেকেই এই চোরাচালান বেড়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর ফেনসিডিলের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। সমুদ্রপথে হেরোইনের চোরাচালানও হয়।
অস্ত্র-শস্ত্রের চোরাচালান:
দেশের অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংগ্রাম এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য অবৈধ অস্ত্র-শস্ত্রের চাহিদা রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত এবং কক্সবাজার এলাকায় চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র-শস্ত্রের আনাগোনা বেশি। কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছেও সমুদ্রপথে অস্ত্র চোরাচালান হয়।
চোরাচালান প্রতিরোধ:
সীমান্ত রক্ষী বাহিনী, কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, এবং শুল্ক বিভাগ চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করে। মাদকদ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে পৃথক সংস্থা রয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে নগদ অর্থ পুরস্কারের ব্যবস্থা আছে।
চোরাচালানের অর্থনৈতিক প্রভাব:
চোরাচালান দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি রাজস্ব ক্ষতি করে, অবৈধ অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটায়, এবং বৈধ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করে।
চোরাচালানের শাস্তি:
চোরাচালানের শাস্তি হিসেবে পাচারকৃত পণ্য বাজেয়াপ্ত হয় এবং চোরাচালানকারীকে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ।