চাঁদপুর সদর: মেঘনার বুকে ঐতিহ্যের ধারা
চাঁদপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। ৩০৮.৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলা মেঘনা, ডাকাতিয়া ও সাতবাড়িয়া বিলের মতো জলাশয়ের অপরূপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। ২৩°০৭´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৪´ থেকে ৯০°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এ উপজেলার উত্তরে মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর, দক্ষিণে হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ, পূর্বে হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ এবং পশ্চিমে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
চাঁদপুর সদরের ইতিহাস সমৃদ্ধ। ১৮৯৭ সালে পৌরসভা গঠিত হলেও ১৯৮৪ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৯২০ সালে আসামের চা বাগানের কুলিদের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল চাঁদপুর স্টীমার ঘাট। এই আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী, মওলানা শওকত আলী, মওলানা মোহাম্মদ আলী, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাশচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতারা চাঁদপুরে এসেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর সদর ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল এবং ওয়ারলেস বাজার, আশিকাটি বাজার, বাগাদী বাজার প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, চাঁদপুর সদরের জনসংখ্যা ৪৬৫৯১৯; পুরুষ ২২৬৯৫৯, মহিলা ২৩৮৯৬০। মুসলিম ৪৩৮৮০৭, হিন্দু ২৬২৮৬, বৌদ্ধ ৭৫, খ্রিস্টান ২৬৫ এবং অন্যান্য ৪৮৬। এখানে টিপরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। চাঁদপুর সদরের সাংস্কৃতিক চিত্রও সমৃদ্ধ। ৮১টি ক্লাব, ৫টি লাইব্রেরি, ৩টি সিনেমা হল, ১৩টি নাট্যদল, ৪টি মহিলা সংগঠন, ১টি সরকারি শিশু সদন, ২টি পার্ক এবং ১টি স্টেডিয়াম এ উপজেলার সাংস্কৃতিক ভাবমূর্তিকে সমৃদ্ধ করে।
অর্থনীতি:
চাঁদপুর সদরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। কৃষি ৩৩.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৮%, শিল্প ১.৫৪%, ব্যবসা ২০.৪৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪৪%, চাকরি ১৩.২৮%, নির্মাণ ২.৭৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.১৯% এবং অন্যান্য ১৮.০৮%। ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, আখ, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এই উপজেলার প্রধান রপ্তানি পণ্য। বাবুরহাটের বিসিক শিল্প নগরী অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
চাঁদপুর সদরের শিক্ষার হার ৫৬.১%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর সরকারি কলেজ (১৯৪৬), চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৪) এবং আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যসেবার জন্য ৭টি হাসপাতাল, ১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ১টি দাতব্য চিকিৎসালয়, ১৪টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ২টি মাতৃসদন রয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা মেঘনার বুকে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক হিসেবে বিবেচিত হয়।