চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরিচালিত এটি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একে ‘বিএএফ জহুরুল হক ঘাটি’র অংশ হিসেবে ব্যবহার করে। এটি পূর্বে এম.এ. হান্নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামে পরিচিত ছিল, যা আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এম.এ. হান্নানের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার এটিকে ১৮ শতাব্দীর দরবেশ শাহ আমানতের নামে নামকরণ করে।
বিমানবন্দরটি বার্ষিক ১৫ লক্ষ যাত্রী এবং ৬ হাজার টন মালবাহী পরিবহনের সক্ষমতা রাখে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার আরিরাং ফ্লাইং স্কুলের একটি ঘাটির কাজও করে। চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় থেকে ২০ কিলোমিটার এবং রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১৮.৫ কিলোমিটার দূরে, কর্ণফুলী নদীর তীরে পতেঙ্গা এলাকায় অবস্থিত। বিমানবন্দরের আশেপাশে কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে।
১৯৪০ এর দশকে ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ‘চট্টগ্রাম এয়ারফিল্ড’ নামে পরিচিত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ যুদ্ধ কার্গো গ্রুপ এখান থেকে ১৯৪৪-৪৫ সালের বার্মা অভিযানের সময় সরবরাহ পরিবহন করেছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এটি বাংলাদেশী বিমানবন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯০ এর দশকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যাংকক, দুবাই এবং অন্যান্য উপসাগরীয় শহরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু করলে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
১৯৯৮ সালে ব্যাপক সংস্কার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২০০০ সালে টার্মিনালটি আধুনিকীকরণ করা হয়। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার ৫১.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যে শিমিজু ও মারুবেনি নামক জাপানি সংস্থা এই উন্নয়ন কাজ করে। রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে এবং টারমাকের উন্নয়নের ফলে বৃহৎ বিমান যেমন বোয়িং ৭৪৭-৪০০ অবতরণ করতে পারে। ২০০৫ সালে থাই এয়ারওয়েজকে দশ বছরের জন্য বিমানবন্দর পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয় নি।
বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স এখানে পরিষেবা দিচ্ছে। ২০০০ সালে সম্পন্ন উন্নয়ন কাজের পর ২,২০,০০০ বর্গফুট আয়তনের টার্মিনালে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উভয় ফ্লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানবন্দরে একটি কার্গো টার্মিনাল এবং আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডধারীদের জন্য একটি লাউঞ্জ রয়েছে। একটি ৪৫ মিটার প্রস্থের এবং ২,৯৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের রানওয়ে বিমানের ব্যবহারের জন্য উপযোগী। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এবং জিইসি এলাকা থেকে গাড়ি বা ট্যাক্সিতে বিমানবন্দরে সহজেই যাওয়া যায়।