বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা: এক ঐতিহাসিক পটভূমি
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা, একটি ঘটনা যা বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পটভূমি তৈরি হয়েছিল বহু দীর্ঘ এবং জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯১২ সালে তার রদ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের রাজনীতিকরণ, দ্বিজাতিতত্ত্বের আবির্ভাব ও পাকিস্তানের সৃষ্টি - এ সবই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্বসূরী।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা দুর্বল হতে থাকে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতির বৈষম্য বাঙালিদের মধ্যে জাতীয় সচেতনতা জাগ্রত করে। এই পরিস্থিতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ দ্রুত বিকাশ লাভ করে। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার ঘোষণা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ষড়ভুজা দাবি, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান - এসবই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় এবং এরপর পাকিস্তান সরকারের অসহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসে। শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা দাবি এবং ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার এবং ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রির হামলার পর, ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগরে গঠিত অস্থায়ী সরকার স্বাধীনতা ঘোষণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে বাঙালি জাতির অদম্য সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অবদান রেখেছে।