গোপালপুর: টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলা একটি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ অঞ্চল। ১৯৩.৩৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°২৯´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৫´ থেকে ৯০°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে মধুপুর, দক্ষিণে ঘাটাইল ও ভূয়াপুর, পূর্বে ঘাটাইল ও মধুপুর এবং পশ্চিমে সরিষাবাড়ী ও ভূয়াপুর উপজেলা দ্বারা গোপালপুর বেষ্টিত।
- *জনসংখ্যা ও ধর্ম:** ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, গোপালপুরের জনসংখ্যা প্রায় ২৫২৩৩১; যার মধ্যে পুরুষ ১২৩৫০৪ এবং মহিলা ১২৮৮২৭। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশই মুসলিম (২৪২৬০০), এরপর হিন্দু (৯৬৭৪), খ্রিস্টান (১৯) এবং অতি কম সংখ্যক বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও জলাশয়:** আত্রাই, ঝিনাই ও বৈরান নদী এবং সরাতল বিল, দিগদা বিল, নগিল্লা বিল, ডোগা বিল ও শাখাল বিল গোপালপুরের উল্লেখযোগ্য জলাশয়। এই নদী ও বিলগুলি এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- *প্রশাসন ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** ১৯২০ সালে গোপালপুর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৪ সালে গোপালপুর পৌরসভা গঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গোপালপুর থানা দখল করে নেয়। পানকাতা, সাইলাজানি, হেমনগর প্রভৃতি স্থানে তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলায় একটি বধ্যভূমি ও একটি গণকবর রয়েছে। প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে খামার বাড়ী ও আনন্দময়ী কালীমন্দির উল্লেখযোগ্য।
- *অর্থনীতি ও শিক্ষা:** গোপালপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, ডাল, সরিষা প্রধান ফসল। শিক্ষার দিক থেকে, উপজেলায় ৫টি কলেজ, ৪৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৮), মেহেরুন্নেছা মহিলা কলেজ (১৯৯৫), হেমনগর শশীমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০০) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
- *সংস্কৃতি ও যোগাযোগ:** গোপালপুরের সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, হাটবাজার এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে পাকা রাস্তা, আধা-পাকা রাস্তা এবং রেলপথ উল্লেখযোগ্য।
গোপালপুরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতি একে টাঙ্গাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে স্থাপন করেছে।