গুম ও হত্যাকান্ডের বিচার

আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:২৩ পিএম

বাংলাদেশে গুম ও হত্যাকান্ডের বিচার: এক বেদনার কাহিনী

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের এই দিনে, বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ভয়াবহ বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। বিগত বছরগুলিতে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শাসনামলে, অসংখ্য মানুষ রহস্যজনকভাবে গুম হয়েছে, এবং অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে। এই ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

গুমের শিকার ও তাদের পরিবারের সংগঠন: 'মায়ের ডাক' নামক সংগঠন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করে তাদের ন্যায়বিচারের দাবি তুলে ধরে আসছে। তাদের সাথে আরও 'আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)' সহ বহু মানবাধিকার সংগঠন এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি, সমাবেশ, ও মানববন্ধনের মাধ্যমে জনমত গঠনে প্রয়াস চালাচ্ছে।

গুম কমিশন ও তদন্ত: অন্তর্বর্তী সরকার গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১৬০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। কমিশন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যেমন র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ, ডিজিএফআই ইত্যাদির বিরুদ্ধেও অভিযোগের তদন্ত করছে। তদন্তে এই বাহিনীর কয়েকটি গোপন বন্দিশালাও উদ্ঘাটন হয়েছে। এই তদন্ত কাজ কতটা সুষ্ঠু হবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাবী: এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) সহ বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের গুম ও হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা স্বাধীন তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের সহায়তা নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) সরকারের কাছে বেসামরিক তদারকি, র‌্যাব ভেঙে দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার এবং অবমাননাকর আইন সংশোধনের দাবী জানিয়েছে।

প্রমাণ ও পরিসংখ্যান: বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬০০-৭০০ এর বেশি গুমের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সরকারি কোনো সঠিক পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশিত হয়নি। আইন ও মানবাধিকার সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১২ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে এই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে।

নতুন আইন ও বিচার: গুম প্রতিরোধে আইন সংশোধন করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই আইন পাঠানো হয়েছে। আইনজীবীরা মনে করছেন যে, নতুন আইনে গুমের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ বিচার করা সম্ভব হবে। তবে এই বিচার প্রক্রিয়া কতটা দ্রুত ও সুষ্ঠু হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

সমাবেশ ও প্রতিবাদ: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ভুক্তভোগীরা গুম ও হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে। তারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।

গুম ও হত্যাকাণ্ডের এই বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

মূল তথ্যাবলী:

  • আওয়ামী লীগের শাসনামলে অসংখ্য গুম ও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
  • ‘মায়ের ডাক’সহ বিভিন্ন সংগঠন ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছে।
  • গুমের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠিত হয়েছে, তবে তার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো স্বাধীন তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে।
  • গুম প্রতিরোধে আইন সংশোধন হলেও বিচার প্রক্রিয়া কতটা সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - গুম ও হত্যাকান্ডের বিচার

২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

গুম ও হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া এবং এর সাথে জড়িত চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।