গুম ও হত্যা

বাংলাদেশে গুম ও হত্যা: কমিশনের ভয়াবহ তথ্য উন্মোচন

সতর্কতা: এই প্রতিবেদনের কিছু বর্ণনা আপনার কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে।

গুম কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বাংলাদেশে গুম ও হত্যার নৃশংস বাস্তবতা উঠে এসেছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৬৭৬টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টির তদন্ত করে কমিশন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জড়িত থাকা, গোপন কারাগার, নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ এবং হত্যার পর লাশ গুম করার নানা কৌশল।

  • *গুমের পদ্ধতি:**
  • অনেক ক্ষেত্রে, কাউকে আটক করে নির্যাতন করা হত এবং অন্যদের নাম জেনে তাদেরকেও আটক করা হতো।
  • রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নির্দেশেও গুম ও নির্যাতন চালানো হতো।
  • মোবাইল নজরদারির মাধ্যমে টার্গেট নির্বাচন এবং অবস্থান শনাক্ত করা হতো। ডিজিএফআই-এর তত্ত্বাবধানে এনএমসি এবং পরে এনটিএমসি এই কাজে জড়িত ছিল।
  • অপহরণকারীরা নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ বা আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিত।
  • সাদা পোশাক পরে রাতে অপহরণ করা হতো এবং গাড়িতে তুলে নেওয়ার পর চোখ বাঁধা ও হাতকড়া পরানো হত।
  • *গোপন কারাগার ও নির্যাতন:**
  • গুমের শিকারদের গোপন অন্ধকার কক্ষে রাখা হতো এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।
  • ডিজিএফআই, র‌্যাব, সিটিটিসির আটটি গোপন কারাগারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
  • নির্যাতনের ধরন ছিল অত্যন্ত নৃশংস: ঠোঁট সেলাই করা (ধানমন্ডি, ২০১০), যৌনাঙ্গ ও কানে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া।
  • সেনাবাহিনীর পরিচালিত বন্দিশালায় সাউন্ডপ্রুফ কক্ষ এবং বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো।
  • *হত্যা ও লাশ গুম:**
  • অনেক গুমের শিকারকে হত্যা করা হয়েছে। মাথায় গুলি করে হত্যা এবং সিমেন্টের ব্যাগে বেঁধে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হতো।
  • এক সাক্ষীর বর্ণনায়, র‌্যাবের ‘ওরিয়েন্টেশন’ সেশনে দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
  • একজন ভুক্তভোগীর পালানোর চেষ্টা করার পর তাকে উদ্ধার করে হত্যা করা হয়।
  • আরেকটি লাশ ট্রেনের নিচে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
  • এক ভুক্তভোগী গাড়ির সামনে ফেলে দেওয়ার চেষ্টার পরেও বেঁচে যায়।
  • *বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়:**
  • অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার জন্য বিভিন্ন বাহিনী আলাদাভাবে কাজ করত।
  • অনেক ক্ষেত্রে, কাজে জড়িত ব্যক্তিরা জানতেন না তারা কাকে এবং কেন হত্যা বা নির্যাতন করছে।
  • *ভারতের সম্ভাব্য যোগসাজশ:**
  • গুমের ঘটনায় ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
  • সালাহউদ্দিন আহমেদকে ভারতে স্থানান্তরের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে।
  • বন্দি বিনিময়ের তথ্যও উঠে এসেছে।
  • *কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ:**
  • ২০২৫ সালের মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
  • চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে আরও এক বছর সময় লাগবে।
  • গুমের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
  • রাষ্ট্রীয় ভবনের কর্মকর্তাদের গুমের ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • *কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত:**

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ, শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার দাবি।

এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে গুম ও নির্যাতনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির ভূমিকা এবং সরকারের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৬৭৬টি গুমের অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি তদন্ত করা হয়েছে।
  • রাষ্ট্রীয় বাহিনীর জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • গোপন কারাগার, নির্যাতন এবং হত্যার নৃশংস বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছে।
  • ভারতীয়দের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
  • র‌্যাব বিলুপ্তির এবং শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার দাবি উঠেছে।