বাংলার গভর্নর: একটি ঐতিহাসিক ও প্রশাসনিক বিশ্লেষণ
ব্রিটিশ ভারতের প্রেক্ষিতে বাংলার গভর্নরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথমে বঙ্গ প্রেসিডেন্সির অধীনে গভর্নর জেনারেলের প্রতিনিধি হিসেবে লেফটেন্যান্ট গভর্নর কাজ করতেন। ১৮৩৩ সালের চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে নতুন প্রদেশ গঠিত হলে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের জন্য ১৮৩৫ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত হয়। কিন্তু বাংলার জন্য একজন স্বতন্ত্র লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদ সৃষ্টি হয় ১৮৫৩ সালের চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে। ১৮৫৪ সালের ১ মে স্যার ফ্রেডারিক জেমস হ্যালিডে বাংলার প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর হন।
বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) এর পর নতুন দুটি প্রদেশ - বঙ্গ (বিহার ও উড়িষ্যা সহ) এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামের জন্য লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে পুনরায় একীভূত বাংলার শাসন সপরিষদ গভর্নরের উপর ন্যস্ত হয়। লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল বাংলার প্রথম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
গভর্নরের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি প্রশাসনিক নেতা হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনে কাজ করতেন, আইন প্রয়োগ, কর সংগ্রহ, সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন। গভর্নরের পদটি রোমান সাম্রাজ্যের প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত। প্রাচীন রোমে গভর্নররা ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারক হিসেবে কাজ করতেন, কর ব্যবস্থা ও জনসাধারণের ব্যয় পরিচালনা করতেন। সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্বও তাদের ছিল।
আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গভর্নরের ভূমিকা কম বেশি প্রতীকী হলেও প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেশের সংবিধান ও আইনের উপর নির্ভর করে।