খোয়াই নদী: বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী, যা দুই দেশের সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ত্রিপুরার আঠারমুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করে এই নদীটি। প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সর্পিলাকার নদীটি প্রথমে ত্রিপুরা এবং পরে সিলেট বিভাগের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গিয়ে অবশেষে মেঘনা নদীতে মিশে যায়। খোয়াই নদীর গড় প্রস্থ ১০৬ মিটার। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর তথ্য অনুযায়ী, এর পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২২।
ঐতিহাসিকভাবে, খোয়াই নদী স্থানীয়দের জীবিকার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষিকাজ, মাছ ধরা, নৌ-পরিবহন ইত্যাদি কার্যকলাপের জন্য এই নদী বহুকাল ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে সম্প্রতি দূষণ ও দখলদারীর কারণে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। নদীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও কারখানার নোংরা পানি নিষ্কাশনের ফলে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করার জন্য দুই দেশের যৌথ প্রয়াসের প্রয়োজন।
জনশ্রুতি আছে, খোয়াই নদীর পূর্ব নাম ছিল ‘ক্ষেমা’। একটি জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, এক খাসিয়া কন্যার আত্মাহুতির ফলে নদীর নামকরণ ‘ক্ষেমা’ হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি ‘খোয়াই’ নামে পরিচিত হয়।
খোয়াই নদী বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য সরকার ও স্থানীয়দের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণ করা জরুরী।