খালিয়াজুরি

আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:২৪ এএম

নেত্রকোণার খালিয়াজুরি: হাওরের মাঝে জীবনের সংগ্রাম ও সৌন্দর্য

নেত্রকোণা জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা হল খালিয়াজুরি উপজেলা। ২৪°-৪১´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১°-০৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত এই উপজেলা চারিদিকে হাওরবেষ্টিত। উত্তরে মোহনগঞ্জ উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা এবং পশ্চিমে মদন উপজেলা অবস্থিত। এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই খালিয়াজুরি দীর্ঘদিন ধরে দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় একজন, সঞ্জয় সরকার এই দুর্গমতার কথা ছড়ায় উঠে এনেছিলেন: ‘যেখানে চলে না রিকশা, গাড়ি/ তারই নাম খালিয়াজুরি’।

ঐতিহাসিক পরিচয়: কথিত আছে, একসময় কামরূপের রাজধানী খালিয়াজুরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জিতারী নামক এক সন্ন্যাসীর দখলে চলে যাওয়ার পর কামরূপের শাসনচ্যুত হয়। পরবর্তীতে ঈশাখাঁর শাসনাধীন হয়, পরে মজলিশদারদের ও শেষে অষ্টাদশ শতাব্দীতে হোমবংশীয়দের শাসনাধীন হয়। ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা বন্দোবস্তের সময় রামশংকর চৌধুরী, জয়প্রসাদ চৌধুরী, অনুপ নারায়ণ চৌধুরী প্রমুখ এই পরগনার মালিক ছিলেন। ১২০৪ বঙ্গাব্দে ঋণের কারণে পরগনার কিছু অংশ বিক্রি হয়ে যায় এবং বারবার হাত বদল করে। ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া গীতিনাট্যের নায়ক নদের চাঁদের বাড়ি খালিয়াজুরি বলেও কথিত আছে।

জনসংখ্যা ও ধর্ম: মুসলমান, হিন্দু এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন খালিয়াজুরিতে বাস করে। মুসলমানরা সুন্নি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত।

অর্থনীতি: খালিয়াজুরির প্রধান কৃষিপণ্য ধান। মাছ ধরা অন্যতম আয়ের উৎস। ১২,১২৮টি জেলে পরিবারের ৩৬,৩৫৪ জন মানুষ মাছ ধরায় নিয়োজিত। উপজেলায় ১২৪২টি সরকারি পুকুর এবং ২৫টি জলমহাল রয়েছে। প্রতিবছর ২৪৬০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। নৌকা তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ণ দারুশিল্প।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: খালিয়াজুরির শিক্ষার হার ৩৫.৬৮%। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও, চিকিৎসক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

যোগাযোগ: নেত্রকোণা শহর থেকে খালিয়াজুরি যেতে হয় মদন বা মোহনগঞ্জ উপজেলা হয়ে। অনেক এলাকায় ডুবে যাওয়া সড়ক এবং নৌকা ব্যবহার করতে হয়। বর্ষাকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের ১৬টি দুর্গম উপজেলার তালিকায় খালিয়াজুরিকে অন্তর্ভুক্ত করে।

সাম্প্রতিক ঘটনা: খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জব্বার ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয়: হাওরের জলাভূমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি খালিয়াজুরি দারিদ্র্য, দুর্গমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় গ্রস্ত। সরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও অন্যান্য দুর্গম এলাকার মতো এখানেও উন্নয়নের অভাব রয়েছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • নেত্রকোণা জেলার একটি দুর্গম উপজেলা হল খালিয়াজুরি
  • হাওরবেষ্টিত অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে যোগাযোগ সমস্যায় ভোগে
  • ধান ও মাছ চাষ, নৌকা তৈরি প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রয়োজন
  • ২০১৯ সালে দুর্গম উপজেলা হিসেবে ঘোষিত

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।