খান ইউনুস: গাজার একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর
ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজা ভূখণ্ডে অবস্থিত খান ইউনুস শহরটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খান ইউনুস গভর্নরেটের রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই শহরটি পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৪শ শতাব্দীর পূর্বে এটি 'সালকাহ' নামে একটি ছোট গ্রাম ছিল। ১৩৮৭-৮৮ সালে আমির ইউনুস আল নুরুজির দ্বারা পথিক ও ক্যারাভানের রক্ষার জন্য একটি 'খান' (ক্যারাভানসরাই) নির্মাণের পর এই এলাকার নামকরণ হয় 'খান ইউনুস'। ইউনুস আল নুরুজি মামলুক সুলতান বারকুকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইউনুস ইবনে আব্দুল্লাহ আল নুরুজির কার্যসচিব ছিলেন। তার মৃত্যুর পরও এই খান কেন্দ্র করে শহরটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন এখানে কেনাকাটার জন্য আসত। মামলুক ডাক সেবার সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী বিশ্রামস্থল হিসেবেও এই শহরটি ব্যবহৃত হতো।
জনসংখ্যার দিক থেকে খান ইউনুস গাজা ভূখণ্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ফিলিস্তিন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭ সালে এর জনসংখ্যা ছিল ১৪২,৬৩৭ জন, ২০১০ সালে ২০২,০০০ জন এবং ২০১২ সালে ৩৫০,০০০ জনের বেশি। গ্রীষ্মে এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২৬০ মিলিমিটার। খান ইউনুসে বেশ কয়েকটি খোলা বাজার (সউক) রয়েছে। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনে সর্বোচ্চ বেকারত্বের হার ছিল খান ইউনুসে। এখানে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও অবস্থিত।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইল খান ইউনুস অধিকৃত করে। ২০০১ ও ২০০২ সালে ইসরাইলি হেলিকপ্টার হামলার শিকার হয় এই শহর। বর্তমানে এটি গাজার হামাস প্রশাসনের অধীনে রয়েছে। ২০০৬ সালের ফিলিস্তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খান ইউনুস থেকে হামাস ও ফাতাহ উভয় দলের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।