ক্যালেন্ডার: সময়ের হিসাবের ঐতিহাসিক যাত্রা
মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে সাথে সময়ের হিসাব রাখার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণে বর্ষপঞ্জী বা ক্যালেন্ডারের জন্ম। সময়ের প্রাচীনতম নথিভুক্ত হিসাব ব্রোঞ্জ যুগের মিশরীয় ও সুমেরীয় ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতেও বৈদিক যুগ থেকেই জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে অত্যাধুনিক ক্যালেন্ডার ব্যবহৃত হতো, যা অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত হয়নি বলে ইউকিও ওহাশি মনে করেন।
লৌহ যুগে ব্যাবিলনীয় ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে প্রাচ্যে বিভিন্ন ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা উদ্ভাবিত হয়। জরথুস্ট্রিয়ান ও হিব্রু ক্যালেন্ডার এই ক্যালেন্ডার ব্যবস্থারই অংশ। ধ্রুপদী গ্রীসে হেলেনিক ক্যালেন্ডারের জন্ম হয় এবং হেলেনিস্টিক যুগে রোমান ও বিভিন্ন হিন্দু ক্যালেন্ডারের বিকাশ ঘটে।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার রোমান ক্যালেন্ডার সংস্কার করেন। তার ‘জুলিয়ান’ ক্যালেন্ডার চন্দ্রের পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করতো না বরং প্রতি চার বছরে একটি লিপ ডে প্রবর্তন করে। ১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি ১৩ জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের অসঙ্গতি সম্পর্কে সংশোধন করে ‘গ্রেগরিয়ান’ ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্র পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে তৈরি।
আধুনিক ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য বিশ্ব ক্যালেন্ডার, আন্তর্জাতিক স্থির ক্যালেন্ডার সহ বেশ কিছু প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। বাংলা বর্ষপঞ্জী বা বঙ্গাব্দ বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবহৃত একটি ঐতিহ্যবাহী সৌর পঞ্জিকা। কিছু ইতিহাসবিদ ৭ম শতাব্দীর হিন্দু রাজা শশাঙ্ককে এর প্রবর্তক বলে মনে করেন। জুলিয়ান ও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ইতিহাস ও ব্যবহার বিশ্লেষণ করা হয়েছে উক্ত লেখায়। শকাব্দ, বিক্রম সংবৎ, মায়া পঞ্জিকা সহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ক্যালেন্ডার ও তাদের গুরুত্ব এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরানি বর্ষপঞ্জী, বুদ্ধাব্দ, চীনা বর্ষপঞ্জী, কোরিয়ান বর্ষপঞ্জী ও নেপাল সংবৎ এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। ইসলামি ক্যালেন্ডার চন্দ্র মাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং হিজরতের ঘটনার স্মৃতি রাখার জন্য প্রচলিত। বাইজেন্টাইন ক্যালেন্ডার ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ দ্বারা ব্যবহৃত হতো। প্রতিটি ক্যালেন্ডার তৈরির পিছনে ঐতিহাসিক ঘটনা ও জ্যোতির্বিদ্যা বিজ্ঞানের ভূমিকা বর্ণনা করা হয়েছে।