কুলাউড়া

কুলাউড়া: মৌলভীবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাসে পরিপূর্ণ। ৫৪৫.৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা ২৪°১৯´ থেকে ২৪°৩৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৪´ থেকে ৯২°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। উত্তরে ফেঞ্চুগঞ্জ ও বড়লেখা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে জুড়ী এবং পশ্চিমে কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলায় কুলাউড়া ঘেরা।

প্রায় ৩৬০১৯৫ জনসংখ্যার এই উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। মনিপুরী ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীও এখানে বাস করে। মনু নদী কুলাউড়ার প্রধান জলাশয়। ১৯২২ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯২ সালের ১০ জানুয়ারী উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৯৬ সালে কুলাউড়া পৌরসভা গঠিত হয়।

কুলাউড়ার ইতিহাস রাজকীয় ঐতিহ্যে ভরপুর। পৃথিম পাশার নবাব বাড়ি (১৮ শতকের প্রথমভাগ), ভাটেরার তাম্রফলক, রঙ্গীরকূল বিদ্যাশ্রম, গগনটিলা, চাঁনগ্রাম দিঘি ইত্যাদি প্রাচীন নির্দেশক ও প্রত্নসম্পদ এ উপজেলার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৩৯ সালের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন- সবকিছুতে কুলাউড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধেও কুলাউড়া অবদান অসামান্য। পাকবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়েছে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষ।

শিক্ষার দিক থেকে কুলাউড়া উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ৯টি কলেজ, ৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ, নবীনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, নয়াবাজার কেসি উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য।

কুলাউড়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। চা, রাবার, ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। চা বাগান, রাবার বাগান, মুরাইছড়ার ইকোপার্ক- এগুলো কুলাউড়াকে আলাদা করে তুলে ধরে। কুটিরশিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

কুলাউড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত। পাকা ও কাঁচা রাস্তার জালে জড়িত। রেলপথ ও নৌপথও রয়েছে। বিভিন্ন হাটবাজার ও মেলা কুলাউড়ার সাংস্কৃতিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার ধীরে ধীরে বাড়ছে।

কুলাউড়া ভবিষ্যতে আরও বেশি উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। তবে উন্নয়নের জন্য আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

মূল তথ্যাবলী:

  • কুলাউড়া মৌলভীবাজারের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
  • ৫৪৫.৭৩ বর্গ কিমি আয়তন এবং প্রায় ৩৬০১৯৫ জনসংখ্যা
  • মনু নদী প্রধান জলাশয়
  • ১৯২২ সালে থানা, ১৯৯২ সালে উপজেলা এবং ১৯৯৬ সালে পৌরসভা গঠন
  • ঐতিহাসিক স্থান ও ঘটনায় সমৃদ্ধ
  • চা ও রাবারের জন্য বিখ্যাত