কুমিল্লা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কুমিল্লা শুধুমাত্র একটি নগর নয়, বরং ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই শহর প্রাচীন বাংলার গৌরবময় অতীতের সাক্ষী। একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী হিসেবে কুমিল্লা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান:
কুমিল্লা ২৩°২৭′০″ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°১২′০″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিকে টমসম ব্রিজের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। উত্তরে বুড়িচং ও ত্রিপুরা, দক্ষিণে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম, পশ্চিমে বরুড়া অবস্থিত। গোমতী ও ছোট ফেনী নদী কুমিল্লার মাঝে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
কুমিল্লা শব্দটি প্রাচীন নাম কমলাঙ্ক থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ পদ্মফুলের দীঘি। কুমিল্লা একসময় প্রাচীন সমতট রাজ্যের অধীনে ছিল। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে হরিকেল রাজাদের, অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই-ময়নামতি দেববংশ এবং দশম-একাদশ শতাব্দীতে চন্দ্রবংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৬৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক এবং ১৭৭৬ সালে কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল কুমিল্লায়। ১৯৬০ সালে জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা। ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৃথক জেলা হয়।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি:
শমসের গাজী, ১৮ শতকের একজন বীর যোদ্ধা ও প্রশাসক কুমিল্লার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি এক সময় সমগ্র কুমিল্লা অঞ্চলকে শাসন করেছিলেন।
অর্থনীতি:
কুমিল্লা শহর একটি বিভাগীয় শহর এবং একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। কুমিল্লা বিমানবন্দর, ডুলিপাড়া এলাকায় অবস্থিত। এর পাশাপাশি, বিবির বাজার স্থলবন্দর, বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং ইকোনমিক জোন কুমিল্লার অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কৃষিকাজ, ব্যবসা, চাকরি কুমিল্লার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি। বিখ্যাত খদ্দর কাপড়ের জন্য কুমিল্লা সারা দেশে পরিচিত।
শিক্ষা:
কুমিল্লা একসময় 'শিক্ষানগরী' নামে পরিচিত ছিল। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা জিলা স্কুল, এখানকার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পর্যটন:
লালমাই-ময়নামতির প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপনা, শালবন বিহার, ময়নামতি জাদুঘর কুমিল্লার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।
কুমিল্লা একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর। ঐতিহ্যের স্মৃতি ধারণ করে কুমিল্লা আধুনিকতার স্পর্শে এগিয়ে যাচ্ছে।