কালকিনি: মাদারীপুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলা ২০৪.২৮ বর্গ কিমি আয়তনের একটি অঞ্চল। এর অবস্থান ২৩°০০´ থেকে ২৩°১০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৬´ থেকে ৯০°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে মাদারীপুর সদর ও শরিয়তপুর সদর উপজেলা, দক্ষিণে গৌরনদী ও আগৈলঝারা, পূর্বে গোঁসাইরহাট, মুলাদী ও ডামুড্যা, এবং পশ্চিমে কোটালিপাড়া ও গৌরনদী উপজেলা কালকিনির সীমান্তবর্তী।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কালকিনির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৯১৭৬৪, যার মধ্যে পুরুষ ৯৭৭১৩ এবং মহিলা ১০৪০৫১। ধর্মীয়ভাবে, এখানে ১৮৯৪৭৫ মুসলিম, ১২২৬৯ হিন্দু এবং ২০ খ্রিস্টান বাসিন্দা রয়েছে। আড়িয়াল খাঁ ও ঘাঘর নদী উপজেলার প্রধান জলাশয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, ১৯০৯ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কালকিনি ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলার গোপালপুরের তিন গম্বুজ মসজিদ (১৮৬৯), আলীনগরের গোদাধরদি শিবমন্দির, চরফতেহপুরের দুর্গামন্দির ও পঞ্চরত্নমন্দির (১৯২৪), এবং সেনাপতির দিঘি (মোগল আমল) উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের ইতিহাস কালকিনির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে গভীরভাবে খোদাই করা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে, কালকিনি গড় শিক্ষার হার ৪৬.৩%। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন সাহেব রামপুর কবি নজরুল ইসলাম কলেজ, কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ, এবং আরও অনেক উচ্চ বিদ্যালয়। অর্থনীতিতে, কৃষিকাজ (ধান, পাট, সরিষা প্রভৃতি) কালকিনির প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। উপজেলায় বিভিন্ন কুটিরশিল্প, যেমন লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, ও বেতশিল্পও বিদ্যমান।
যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য, কালকিনিতে ২০৩ কিমি পাকা রাস্তা, ৩৪ কিমি আধা-পাকা রাস্তা, ১০০২ কিমি কাঁচা রাস্তা এবং ১২০ কিমি নৌপথ রয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিক থেকে, ৫৬.৪% পরিবার বিদ্যুতের সুযোগ পেয়েছে। পানীয় জলের প্রধান উৎস হল নলকূপ। স্বাস্থ্যসেবার জন্য, একটা সরকারি হাসপাতালসহ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ও ক্লিনিক রয়েছে। ব্র্যাক, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন এনজিও কালকিনিতে কাজ করে।