কাউনিয়া উপজেলা: রংপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত রংপুর জেলার একটি প্রশাসনিক উপজেলা হল কাউনিয়া। তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলাটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৪৭.৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার উত্তরে লালমনিরহাট সদর ও গঙ্গাচড়া উপজেলা, দক্ষিণে পীরগাছা, পূর্বে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট এবং পশ্চিমে রংপুর সদর উপজেলা অবস্থিত।
ইতিহাসের আলোকে: রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, অতীতে তিস্তা নদীর তীরে কাউনিয়া নামে একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম ছিল যা নদীর ক্ষয়ের কারণে বিলীন হয়ে গেছে। এই গ্রামের নাম অনুসারেই এলাকার নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অন্য এক জনশ্রুতি অনুযায়ী, এখানে 'কাউনি' নামক এক ধরণের দানাদার খাদ্যশস্যের প্রচুর চাষ হতো, যার কারণে এলাকাটি পরিচিতি লাভ করেছিল। ১৭৬৯ সালের ছিয়াত্তরের মহাদুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের ইংরেজ তত্ত্বাবধায়ক মিঃ গ্রুস কাউনিয়া থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করেছিলেন বলেও জানা যায়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা: ২৫.৭৭০৮° উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯.৪১৬৭° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত কাউনিয়া উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২২৭,৮০৫ (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ১৭১৪ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার। উপজেলার প্রধান নদী তিস্তা ও বুরাইল।
অর্থনীতি: কাউনিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এখানে ধান, তামাক, বাদাম, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি চাষ হয়। কলা চাষও এখানে উল্লেখযোগ্য। পেশাজীবী ও চাকরিজীবী মানুষেরও বসবাস রয়েছে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি: কাউনিয়া উপজেলা শিক্ষার দিক থেকে অগ্রগতি সাধন করেছে। এখানে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমন: কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা। উপজেলার সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়।
প্রশাসন: কাউনিয়া থানা ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন, ৮৯ টি মৌজা এবং ৭৮ টি গ্রাম রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে কাউনিয়ার অবদান: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কাউনিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল।