ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ

আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৭ পিএম

ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ (১৪ এপ্রিল ১৯২২ - ১৯ জুন ২০০৯) ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি তার অসাধারণ সরোদ বাদন এবং গানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তার জন্ম বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তার পিতা ছিলেন বিখ্যাত সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, যিনি মাইহার রাজ্যের সভাসঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। আলী আকবর খাঁ মাইহারেই বেড়ে উঠেন এবং তার পিতার কাছ থেকেই তিনি সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি মাত্র তিন বছর বয়সে কণ্ঠসঙ্গীতের মাধ্যমে সঙ্গীত শিক্ষার সূচনা করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচিত হন। নয় বছর বয়সে তার বাবা তাকে সরোদ শেখানো শুরু করেন এবং ১৯৩৩ সালে তার চাচা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ তাকে একটি নিজ হাতে তৈরি সরোদ উপহার দেন। তিনি প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা করে রিয়াজ করতেন।

১৩ বছর বয়সে এলাহাবাদে তিনি প্রথম মঞ্চে সরোদ পরিবেশন করেন। চল্লিশের দশকে তিনি বিভিন্ন সঙ্গীত সম্মেলনে অংশগ্রহণ শুরু করেন এবং ১৯৩৮ সালে লক্ষ্ণৌতে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৩ সালে যোধপুর রাজ্যের সভা-সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ছয় বছর সেখানে অবস্থান করেন। ১৯৪৮ সালে মুম্বাই চলে আসেন এবং চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ ও ‘ঝিন্দের বন্দী’ এর মতো উল্লেখযোগ্য ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় তিনি কাজ করেছেন।

১৯৫৫ সালে তিনি প্রথম ইংল্যান্ড ও পরে আমেরিকা সফরে যান। পাশ্চাত্যের টেলিভিশন পর্দায় প্রাচ্যের সঙ্গীত নিয়ে তিনিই প্রথম উপস্থিত হন। ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্ক থেকে তার লং প্লে রেকর্ড প্রকাশিত হয়, যা আমেরিকা থেকে প্রকাশিত প্রাচ্যের সঙ্গীতের প্রথম লং প্লে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় জর্জ হ্যারিসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ অংশগ্রহণ করেন। সে অনুষ্ঠানে পণ্ডিত রবিশঙ্কর এবং ওস্তাদ আল্লা রাখার সঙ্গে তার বাজানো ‘বাংলাদেশ ধুন’ অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

ভারত সরকার তাকে দুইবার প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া এওয়ার্ড প্রদান করে, এবং পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ খেতাবে ভূষিত করে। প্রেসিডেন্ট কেনেডির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে তিনি যোগদান করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৯১ সালে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রসারে অবদানের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন জেনিয়াস ফেলোশিপ লাভ করেন। গ্র্যামি এওয়ার্ডের নমিনেশন পেলেও কৌশলগত কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯ জুন ২০০৯ সালে সানফ্রান্সিসকোতে তার মৃত্যু হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯২২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম
  • বিখ্যাত সরোদ বাদক ও সঙ্গীতজ্ঞ
  • পিতা: ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
  • 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'-এ অংশগ্রহণ
  • পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ খেতাব লাভ
  • ২০০৯ সালে মৃত্যু

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।