গ্রন্থাগার ও জাদুঘরের উপকরণ সংরক্ষণ: একটি বিস্তারিত আলোচনা
গ্রন্থাগার ও জাদুঘর আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও জ্ঞানের ভান্ডার। এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে সংরক্ষিত তালপাতা, ভূর্জপত্র, কাগজে লিখিত পান্ডুলিপি, বই, জার্নাল, মানচিত্র, চিত্রকর্ম, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, মূর্তি ইত্যাদি উপকরণগুলি অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আলো, তাপ, আর্দ্রতা, কীটপতঙ্গ, ছত্রাক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার ফলে এই উপকরণগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই উপকরণগুলির দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রন্থাগার উপকরণ সংরক্ষণ:
প্রাচীন কালে গ্রন্থাগারে তালপাতা ও ভূর্জপত্রে লিখিত পান্ডুলিপি সংরক্ষণ করা হতো। পরে হাতে তৈরী কাগজের প্রচলন শুরু হলে লেখার উপকরণ হিসেবে কাগজের ব্যবহার শুরু হয় এবং তখন থেকেই গ্রন্থাগারগুলিতে হাতে লেখা কাগজের পান্ডুলিপি, ক্ষুদ্র চিত্র, দলিল, নথি এবং চুক্তিপত্র সংগ্রহ করা হতে থাকে। আঠারো শতক থেকে ছাপানো বইপত্র, জার্নাল, মানচিত্র, সনদ এবং শ্রুতি-দর্শন টেপ ইত্যাদিও সংরক্ষিত হতে থাকে।
এই উপকরণগুলির প্রধান উপাদান সেলুলোজ। আলো, তাপ, আর্দ্রতা, ছত্রাক, পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গের প্রভাবে এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরানো দিনে সূর্যের আলোতে মেলে রাখা, নিমের ডাল ঝুলিয়ে রাখা এবং কাপড়ের পুটলিতে বেঁধে রাখার মতো দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। আধুনিক সময়ে বাষ্পধৌতকরণ, পরিষ্কারকরণ, অম্লমুক্তকরণ, পুনরুদ্ধার, লেমিনেশন ইত্যাদি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার, গণগ্রন্থাগার এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর গ্রন্থাগারের মতো বৃহৎ গ্রন্থাগারগুলি আধুনিক সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।
জাদুঘর উপকরণ সংরক্ষণ:
জাদুঘরে সংরক্ষিত উপকরণগুলির মধ্যে রয়েছে প্রাচীন পান্ডুলিপি, সনদ, ফরমান, হাতির দাঁতের তৈরি সামগ্রী, কাঠের আসবাবপত্র, মৃৎপাত্র, ধাতব বস্তু, প্রস্তর মূর্তি ইত্যাদি। এগুলি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অমূল্য নিদর্শন। জৈব ও অজৈব দুই ধরনের উপকরণের সংরক্ষণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। জৈব উপকরণ ছত্রাক, পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণের শিকার হয়। অজৈব উপকরণে মরিচা, ক্ষয়, বিবর্ণতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। জাদুঘর উপকরণ সংরক্ষণে দেশীয় এবং আধুনিক দুই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে সূর্যের আলোতে মেলে রাখা, কেরোসিন তেল ব্যবহার ইত্যাদি শামিল। আধুনিক পদ্ধতিতে বাষ্পধৌতকরণ, পরিষ্কারকরণ, অম্লমুক্তকরণ, পুনরুদ্ধার, লেমিনেশন, ক্ষয়রোধক প্রলেপ প্রয়োগ ইত্যাদি শামিল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষণ ও গবেষণা পরীক্ষাগার এবং প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের প্রত্নতাত্ত্বিক সংরক্ষণ পরীক্ষাগার এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- উপকরণগুলির প্রকৃতি ও গঠন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন।
- আলো, তাপ, আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ।
- কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের প্রতিরোধ।
- নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
- বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ।
- দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল।
এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রাপ্ত হলে আমরা এই লেখাটি আপডেট করব।