আশাশুনি: সাতক্ষীরা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত আশাশুনি উপজেলা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ৩৭৪.৮১ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ২৬৮,৭৫৪ (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। কপোতাক্ষ, বেতনা, খোলপেটুয়া নদীসহ বিভিন্ন জলাশয় এই উপজেলার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
আশাশুনির নামকরণ নিয়ে একাধিক লোককথা প্রচলিত আছে। ব্রিটিশ আমলে সুন্দরবনের অংশ ছিল এ অঞ্চল। আব্দুস সোবহান নামে এক ফকিরের আস্তানার চারপাশে জনবসতি গড়ে উঠে এবং ‘‘আশাশুনি’’ নামটি প্রচলিত হয় বলে ধারণা করা হয়। বুড়ো পীরের দরগা, বুধহাটা শিবকালী মন্দির (১১৪৬ সালে নির্মিত), শ্রীউলা জামে মসজিদ, হযরত শাহ আজিজের (রঃ) মাযার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আশাশুনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন লড়াইয়ের সাক্ষী এ অঞ্চল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সম্পদ:
উপজেলার উত্তরে সাতক্ষীরা সদর ও তালা, দক্ষিণে শ্যামনগর, পূর্বে পাইকগাছা ও কয়রা, পশ্চিমে কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলা অবস্থিত। কৃষি এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি। পাট, আলু, গম, সবজি, পান, ডাল, আখ প্রধান কৃষি ফসল। চিংড়ি চাষ এখানে উল্লেখযোগ্য।
জনসংখ্যা ও শিক্ষা:
মুসলমান অধিক সংখ্যক এ উপজেলায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। শিক্ষার হার ৪৯.৮%। উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো:
একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র আশাশুনিতে রয়েছে। পাকা, আধা-পাকা ও কাঁচা রাস্তার নেটওয়ার্ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে। তবে, অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের দূষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আর্থ-সামাজিক অবস্থা:
কৃষি এই অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অকৃষি কাজ, ব্যবসা, চাকরি সহ অন্যান্য উৎস থেকেও আয় হয়। বিভিন্ন এনজিও এই এলাকায় সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প ও ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই অঞ্চলের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।
উপসংহার:
আশাশুনি উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা হলেও, এর অনেক চ্যালেঞ্জ এবং উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নের আবশ্যকতা থাকে।