আমজাদ: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, সাহিত্য ও রাজনীতির এক প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব
এই নিবন্ধে আমরা তিনজন আমজাদের কথা বলবো, যাদের নামের মিল থাকলেও ব্যক্তিগত পরিচয় ও কাজের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে। প্রথম আমজাদ হলেন আমজাদ হোসেন (১৪ আগস্ট ১৯৪২ - ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, লেখক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক। দ্বিতীয় আমজাদ হলেন আমজাদ খান (১২ নভেম্বর ১৯৪০ - ২৭ জুলাই ১৯৯২), একজন জনপ্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং পরিচালক। তৃতীয় আমজাদ হলেন আমজাদ হোসেন (১৯২৪-১৯৭১), একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা।
আমজাদ হোসেন (১৯৪২-২০১৮):
চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে শুরু করেও, আমজাদ হোসেন চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনার মাধ্যমে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে 'তোমার আমার' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'আগুন নিয়ে খেলা' (১৯৬৭), 'নয়নমনি' (১৯৭৬), 'গোলাপী এখন ট্রেনে' (১৯৭৮), 'ভাত দে' (১৯৮৪) ইত্যাদি। 'গোলাপী এখন ট্রেনে' চলচ্চিত্রটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। তিনি ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন, যা একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। সাহিত্যেও তিনি অসাধারণ অবদান রেখেছেন এবং একাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। তার দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমানও চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আমজাদ খান (১৯৪০-১৯৯২):
একজন জনপ্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং পরিচালক ছিলেন। তিনি তার ২০ বছরের কর্মজীবনে ১৩০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে মূলত খলনায়ক চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে বোম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে একটি দুর্ঘটনায় কোমায় চলে যান এবং স্থূলকায় হয়ে পড়েন। ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আমজাদ হোসেন (১৯২৪-১৯৭১):
একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি বিবেচিত হন। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও বেসামরিক বাহিনীকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি ১৯২৪ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার চর সাদিরাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংগঠক ছিলেন এবং দুইবার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৬২ ও ১৯৭০)। শেখ মুজিবুর রহমানের নিকটতম সহযোগী ছিলেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। পাবনার আমজাদ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, আমজাদের নামের মিল থাকলেও, তাদের কর্মক্ষেত্র, কাজ, জন্ম তারিখ ও মৃত্যুর তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি নিশ্চিত করার জন্য সঠিক তথ্য সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ।