আব্দুল কাদের: একজন অসাধারণ অভিনেতা ও নাট্যকার
আব্দুল কাদের (১ এপ্রিল ১৯৫১ - ২৬ ডিসেম্বর ২০২০) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা। তিনি ১৯৯৪ সালে হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে স্থান করে নেন এবং ‘বদি’ নামেই পরিচিতি লাভ করেন। তার অভিনয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় নাটক ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও দেখা গিয়েছে। অভিনয় ছাড়াও তিনি একজন কর্পোরেট কর্মকর্তা হিসেবে উচ্চপদস্থ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
আব্দুল কাদের ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মুন্সীগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুল জলিল এবং মাতা আনোয়ারা খাতুন। সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন ও নাট্যকর্ম:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলে তিনি তিন বছর নাট্য সম্পাদক ছিলেন। ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর যুগ্ম সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৮৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় করেন। ‘এসো গল্পের দেশে’ তার অভিনীত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক। থিয়েটারে প্রায় ৩০টি প্রযোজনা এবং ১০০০টির বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেন এবং টেলিভিশনে প্রায় দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেন। তিনি ‘টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাসের সহ-সভাপতি ছিলেন।
পেশাগত জীবন:
তিনি সিংগাইর ডিগ্রি কলেজ ও লোহাজং কলেজে অর্থনীতিতে শিক্ষকতা করেন। পরে বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এবং ১৯৭৯ সাল থেকে ‘বাটা’ কোম্পানীতে উচ্চপদস্থ পদে কর্মরত ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন:
আব্দুল কাদের খাইরুননেছা কাদেরকে বিয়ে করেন এবং তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
মৃত্যু:
আব্দুল কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এবং বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।