লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের, বীর উত্তম (১৪ নভেম্বর ১৯৩৮ - ২১ জুলাই ১৯৭৬) বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন একজন সাহসী সেনা অফিসার, মুক্তিযোদ্ধা এবং বামপন্থী বিপ্লবী নেতা। ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার পরিবার নেত্রকোণার পূর্বধলায় চলে আসে। তার পিতার নাম মহিউদ্দিন আহমেদ এবং মাতার নাম আশরাফুন্নেসা।
আবু তাহের চট্টগ্রামের প্রবর্তক বিদ্যালয় ও কুমিল্লার ইউসুফ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৯ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটেও তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে ১৯৬২ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে কাশ্মীর ও শিয়ালকোট সেক্টরে যুদ্ধ করেন এবং আহত হন। তার বীরত্বের জন্য তাকে ‘মেরুন প্যারাস্যুট উইং’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেশাল কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে আসেন এবং ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাব লাভ করেন। তার ভাই-বোনরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন, যাদেরকে 'ব্রাদার্স প্লাটুন' বলা হতো। যুদ্ধে তিনি আহত হয়ে এক পা হারান।
১৯৭২ সালে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে বামপন্থী রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং জাসদের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২১শে জুলাই তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে ২০১১ সালের ২২শে মার্চ উচ্চ আদালত এই রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে। ১৯৬৯ সালে তিনি লুৎফাকে বিয়ে করেন।