আবুল কাসেম নামটি বহু ব্যক্তির সাথে যুক্ত। উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের জীবনী নিম্নে তুলে ধরা হলো:
- *১. আবুল কাসেম (সাহিত্যরত্ন, ১৯০২-১৯৮৭):** খুলনা জেলার দৌলতপুরে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ছিলেন একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। কলকাতার হোমিওপ্যাথি কলেজ থেকে তিনি ডি এইচ এম এবং এম ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ‘মোহাম্মদী’, ‘আজাদ’, ‘সোলতান’ ও ‘কৃষক’ সহ বেশ কিছু কলকাতা-প্রকাশিত পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ভারত, দূরপ্রাচ্য, ব্রহ্মদেশ, মালয়, ইন্দোনেশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, আমেরিকা ও চীন ভ্রমণ করে তিনি তার অভিজ্ঞতা সাহিত্যে তুলে ধরেন। ‘আমার ভূ-প্রদক্ষিণ’, ‘ভারত ভ্রমণ’, ‘দূর-দূরান্তরে’, ‘পঞ্চনদের দেশে’ ইত্যাদি তার উল্লেখযোগ্য ভ্রমণকাহিনী। ‘মানসী’, ‘ঈশা খাঁ-স্বর্ণময়ী’, ‘হজরত মোহাম্মদ’, ‘মহর্ষি মোহসীন’, ‘বিজ্ঞানের জন্মরহস্য’, ‘মহাসাগরের দেশে’, ও ‘বাঙ্গলার প্রতিভা’ তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। তিনি খুলনা সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও সহসভাপতি ছিলেন এবং ১৯৩০ সালে কলকাতার সারস্বত মহামন্ডল কর্তৃক ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন।
- *২. আবুল কাসেম (১৮৭২-১৯৩৬):** বর্ধমান জেলার কাশিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী এই আবুল কাসেম ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করে তিনি ১৮৯৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ‘দ্য বেঙ্গলি’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক, ‘দ্য মোসলমান’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক, এবং বেশ কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৩ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড ও রাউলাট বিলের প্রতিবাদে তিনি আইন পরিষদ থেকে ইস্তফা দেন। খিলাফত আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বন্যা ত্রাণেও তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন।
- *৩. আবুল কাসেম খান (১৯০৫-১৯৯১):** চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ (বর্তমানে চাঁদগাঁও) থানার মোহরা গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আবুল কাসেম খান ছিলেন একজন আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক নেতা ও শিল্পপতি। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ (সম্মান) ও এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করে ১৯৩৫ সালে বেঙ্গল সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করে তিনি একজন সফল শিল্পপতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ম্যাচ ফ্যাক্টরি, প্লাইউড ফ্যাক্টরি, কটন টেক্সটাইল মিল, নৌ-চালন কোম্পানি, ডকইয়ার্ড ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম বড় মাপের আধুনিক শিল্পপতিরূপে পরিগণিত হন। ১৯৪৬ সালে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে ভারতের কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লির সদস্য নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তান গঠনের পর পাকিস্তান কনস্টিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লির সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি সংসদে কণ্ঠস্বর উঠান। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আইয়ুব খান সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
- *৪. আবুল কাসেম ফায়জুল হক (১৯৪৪-২০০৭):** কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক ও সমাজসেবক। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের পুত্র তিনি ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের টিকিটে জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।