আবদুল গফুর হালী: বাংলাদেশের এক অসাধারণ গীতিকার, সুরকার ও লোকশিল্পী
আবদুল গফুর হালী (৬ আগস্ট, ১৯২৯ - ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট লোকশিল্পী, গীতিকার এবং সুরকার ছিলেন। চট্টগ্রামের চাটগাঁইয়া ভাষায় তিনি মাইজভাণ্ডারী, মুর্শিদি, মারফতি প্রভৃতি ধারায় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন। তার গানের কথা ও সুর উভয়ই অতুলনীয়। তিনি শুধু গান রচনা ও সুরারোপেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং একাধিক চাটগাঁইয়া নাটকও রচনা করেছেন।
জন্ম ও শিক্ষা:
১৯২৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদে আবদুল গফুর হালীর জন্ম। তার পিতা আবদুস সোবহান এবং মাতা গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে ষষ্ঠ শ্রেণির পরে তিনি আর স্কুলে যাননি।
প্রভাব ও অনুপ্রেরণা:
শৈশবকাল থেকেই ঐতিহাসিক গায়ক-গীতিকার আস্কর আলী পণ্ডিতের কাজে অনুপ্রাণিত ছিলেন হালী। পরবর্তীতে মওলানা বজলুল করিম কাঞ্চনপুরী, মাওলানা আবদুল হাদি এবং রমেশ শীলের মতো মাইজভাণ্ডারী সুফি গায়কদের কাজ তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষা নেননি।
পেশা ও সাফল্য:
অল্প বয়সেই আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রের অডিশনে প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯৬৩ সাল থেকে তার গানগুলি নিয়মিতভাবে বেতারে প্রচারিত হয়। ৭ বছর পর পূর্ব পাকিস্তান বেতারে গায়ক-গীতিকার-সুরকার হিসেবে নিবন্ধিত হন। তারপর থেকে তিনি পেশাদার গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক হিসাবে কাজ করে যান। বাংলাদেশের টেলিভিশন ও বেতার চ্যানেলগুলিতে নিয়মিত গান লিখতেন ও সুর করতেন। তিনি ১৫০০-এরও বেশি গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন।
নাটক রচনা:
চাটগাঁইয়া ভাষায় তিনি ছয়টি নাটক রচনা করেছেন। গুলবাহার গীতিনাট্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চায়িত ও বেতার-টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।
সম্মাননা ও পুরস্কার:
তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কার লাভ করেন।
মৃত্যু:
২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মাউন্টেন হাসপাতালে ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন আবদুল গফুর হালী। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতির জন্য অমূল্য অবদান রেখে গেছেন।