বাংলাদেশের লোকশিল্পীরা দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হস্তশিল্পের মাধ্যমে দেশের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে আসছে। লোকশিল্পীদের কাজের মধ্যে রয়েছে কাঁথা, জামদানি, শীতলপাটি, মাদুর, পটচিত্র, বাঁশের কাজ, মাটির কাজ, কাঠের কাজ ইত্যাদি। এই শিল্পীরা গ্রামীণ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়, যদিও শহরাঞ্চলেও কিছু শিল্পী কাজ করেন। তাদের কাজের কারুকার্যময়তা, বৈচিত্র্য এবং মান দেশের ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে। কিন্তু বর্তমান যুগে আধুনিক প্রযুক্তির আগমনে অনেক লোকশিল্প ক্রমশঃ বিলুপ্তির পথে। লোকশিল্পের সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। লোকশিল্পীদের জীবিকা নির্বাহের জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
লোকশিল্পীদের মধ্যে অনেকেই পরিবার-পরম্পরায় এই পেশা শিখে এসেছেন। অনেকেই কোনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেননি, তবুও তাদের দক্ষতা অসাধারণ। তারা সৃজনশীল ধারা দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে, যা দেশের সংস্কৃতির একটি মূল্যবান অংশ। কিছু লোকশিল্পী তাদের কাজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন, আর কিছু লোকশিল্পী শুধুমাত্র ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্যই এই শিল্প চর্চা করে যান।
সাইমন জাকারিয়া একজন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক এবং নাট্যকার। তিনি বাংলা একাডেমির গবেষণা উপবিভাগের উপপরিচালক। লোকাচার বিদ্যায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ‘বাংলাদেশের লোকায়ত রামায়ণের রাম সীতা চরিত্র’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য এমফিল এবং ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য: বিষয় ও ভাষারীতি’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের লোকশিল্পী তালিকা। অন্যদিকে রতন কাহার একজন বিখ্যাত ভারতীয় লোকশিল্পী। তিনি ‘বড়লোকের বেটি লো’ গানের জন্য বিখ্যাত। তার লোকগানে অবদানের জন্য ২০১৯ সালে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।