অধ্যাপক আবদুল গফুর: ভাষা আন্দোলনের এক অক্লান্ত যোদ্ধা
১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ সালে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার (বর্তমান রাজবাড়ী) দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অধ্যাপক আবদুল গফুর। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক এবং ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অপরিসীম। তমদ্দুন মজলিস নামক সংগঠনের সাথে তিনি গভীরভাবে জড়িত ছিলেন এবং এই সংগঠনের মুখপত্র 'সাপ্তাহিক সৈনিক' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন। তবে ভাষা আন্দোলনের কারণে তার লেখাপড়া কিছুটা ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে সেখান থেকেই সমাজকল্যাণ বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। 'পাক্ষিক জিন্দেগী', 'সাপ্তাহিক সৈনিক', 'দৈনিক মিল্লাত', 'দৈনিক নাজাত', 'দৈনিক আজাদ' , 'দৈনিক পিপল', 'দৈনিক দেশ প্রতিদিন' এবং 'দৈনিক ইনকিলাব' সহ অনেক খ্যাতনামা পত্রিকায় বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাও তার থাকে। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের দারুল উলুম (ইসলামিক একাডেমি)-এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট ছিলেন। চট্টগ্রামের জেলা যুব কল্যাণ অফিসার, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ এবং আবু জর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
তার রচিত বহু গ্রন্থ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচিত। 'বিপ্লবী উমর', 'সমাজকল্যাণ পরিক্রমা', 'কোরআনী সমাজের রূপরেখা', 'খোদার রাজ্য', 'ইসলাম কী এ যুগে অচল', 'ইসলামের জীবনদৃষ্টি' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ভাষা আন্দোলনে অসাধারণ অবদানের জন্য ২০০৫ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার জীবন ও কর্ম সর্বদা স্মরণীয় থাকবে।