আনোয়ারা: চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হলো আনোয়ারা। ১৬৪.১০ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২২°০৭´ থেকে ২২°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৯´ থেকে ৯১°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। উত্তরে পটিয়া, দক্ষিণে বাঁশখালী, পূর্বে চন্দনাইশ এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম বন্দর থানা ও বঙ্গোপসাগরের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এই উপজেলা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, আনোয়ারার জনসংখ্যা প্রায় ২৫৯,০২২ জন, যার মধ্যে পুরুষ ১২৬,৭০৯ এবং মহিলা ১৩২,৩১৩ জন। ধর্মীয়ভাবে, অধিকাংশই মুসলিম (২২৪,৪৯৬) , এছাড়াও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষ বসবাস করেন। কর্ণফুলি ও সাঙ্গু নদী এই উপজেলার দুটি প্রধান নদী।
আনোয়ারা থানা ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বর্তমানে এটি উপজেলা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আনোয়ারা ১নং সেক্টরের অধীন ছিল এবং কফকো, কালীগঞ্জ, পারৈকোড়া সহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের তীব্র লড়াই ছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। পাকবাহিনীর নৃশংসতা ও অগ্নিসংযোগের কথাও ইতিহাসে অম্লান রয়েছে। কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানী (কাফকো) এলাকা, কালীগঞ্জ ও পারৈকোড়ায় বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে।
শিক্ষার দিক থেকে, আনোয়ারার গড় শিক্ষার হার ৫১.৯%। এখানে ৪টি কলেজ, ১টি কারিগরি কলেজ এবং ৩৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শহীদ আনোয়ারা কলেজ, আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠিত ১৮৯৯), পারৈকোড়া নয়নতারা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), বটতলী শাহ মোহছেন আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪) উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আনোয়ারার অর্থনীতিতে কৃষি, মৎস্য ও শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কর্ণফুলি ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড (কাফকো) এখানকার গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান। পারকী সী বীচ আনোয়ারার একটি বিশেষ আকর্ষণ। উপজেলায় বিভিন্ন এনজিও, যেমন ব্র্যাক, কারিতাস, আশা, প্রচেষ্টা, ওয়ার্ল্ড ভিশন কাজ করে।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, মোহছেন আউলিয়ার দরগাহ্, আকবরী মসজিদ, চুরুত বিবির মসজিদ, ধলা বিবির মসজিদ, মনু মিঞার দিঘি ও কামান উল্লেখযোগ্য। এই উপজেলা তার ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও সাংস্কৃতিক ধারার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।