৫জি: দ্রুতগতির যোগাযোগের নতুন যুগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ৫জি (5G) নেটওয়ার্ক আবির্ভাব ঘটিয়েছে, যা মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ও ক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৪জি প্রযুক্তির উত্তরাধিকারী হিসেবে ৫জি মোবাইল অপারেটররা স্থাপন শুরু করে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (ITU)-এর IMT-2020 প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ৫জি এর মান নির্ধারিত হয়েছে, যাতে উচ্চগতি, কম বিলম্ব এবং উন্নত সংযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা দেয়।
৫জি নেটওয়ার্ক সেলুলার নেটওয়ার্কের মতো, যেখানে পরিষেবা এলাকা ছোট ভৌগোলিক অঞ্চলে (সেল) বিভক্ত। প্রতিটি সেলে থাকা ৫জি ডিভাইসগুলি বেস স্টেশন ও অ্যান্টেনার মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকে। এই নতুন নেটওয়ার্কগুলি কেবল উচ্চ ডাউনলোড স্পিড (নেটওয়ার্কে একজন ব্যবহারকারী থাকলে ১০ গিগাবাইট/সেকেন্ড পর্যন্ত)ই নয়, উল্লেখযোগ্যভাবে কম বিলম্ব (ল্যাটেন্সি) সরবরাহ করে, যা তাত্ক্ষণিক যোগাযোগের সুবিধা করে।
৫জি-এর তিনটি প্রধান ব্যবহার ক্ষেত্র:
- ইনহ্যান্সড মোবাইল ব্রডব্যান্ড (eMBB): উচ্চ গতির সংযোগ, উচ্চ থ্রুপুট এবং বর্ধিত ক্ষমতা সহ ৪জি এলটিই পরিষেবা থেকে উন্নত মোবাইল ব্রডব্যান্ড।
- আল্ট্রা রিলায়েবল লো ল্যাটেন্সি কমিউনিকেশন (URLLC): অনবচ্ছিন্ন ও শক্তিশালী ডেটা আদান-প্রদানের প্রয়োজন হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্লিকেশন।
- ম্যাসিভ মেশিন টাইপ কমিউনিকেশন (mMTC): বিপুল সংখ্যক ডিভাইসকে সংযুক্ত করার জন্য।
৫জি-এর বিভিন্ন ব্যান্ড:
৫জি তিনটি ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে কাজ করে: লো-ব্যান্ড, মিড-ব্যান্ড এবং হাই-ব্যান্ড (মিলিমিটার ওয়েভ)। লো-ব্যান্ড ৪জি-এর মতোই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে, মিড-ব্যান্ড ১.৭-৪.৭ গিগাহার্টজ, এবং হাই-ব্যান্ড ২৪-৪৭ গিগাহার্টজ ব্যবহার করে। হাই-ব্যান্ড উচ্চতম গতি দিলেও এর পাল্লা সীমিত।
৫জি-র প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ:
৫জি উচ্চগতির ইন্টারনেট, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ও বিনোদন খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। তবে, ৫জি স্থাপনের জন্য উল্লেখযোগ্য অবকাঠামো বিনিয়োগ, স্পেকট্রাম বরাদ্দ, নিরাপত্তা ঝুঁকি, এবং শক্তি দক্ষতা ও পরিবেশগত প্রভাবের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
বাংলাদেশে ৫জি:
বাংলাদেশে ১২ ডিসেম্বর ২০২১ টেলিটক পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালু করে। বেসরকারি অপারেটররা পরবর্তীতে এ সেবা চালু করে। ৫জি গ্রাহকদের দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ভয়েস কল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিকস, আইওটি প্রযুক্তি, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট হোম, স্মার্ট ফ্যাক্টরির মতো নানা সুবিধা দিবে। ৫জি-র সর্বাঙ্গীন বিকাশের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অবকাঠামো, বিনিয়োগ এবং গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।