সৈয়দ হাসান ইমাম (জন্ম: ২৭ জুলাই, ১৯৩৫, বর্ধমান, ভারত) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, টেলিভিশন পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং আজীবন সম্মানের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে যুক্ত ছিলেন।
তার পিতা সৈয়দ সোলেমান আলী আয়কর কর্মকর্তা ছিলেন। হাসান ইমাম মাত্র দুই বছর বয়সে পিতৃহারা হন। পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট ও মাতৃনিবাস বর্ধমানে।
শিক্ষাজীবন শুরু হয় বর্ধমান টাউন স্কুলে। পরে রাজ কলেজ এবং টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে এসে দর্শনার চিনিকলে এবং পরে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে কর্মজীবন শুরু করেন।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি, ১৯৬০ সাল থেকে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৬৪ সালে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। 'রাজা এল শহরে', 'শীত বিকেল', 'জানাজানি', 'ধারাপাত' তার উল্লেখযোগ্য প্রারম্ভিক চলচ্চিত্র। ১৯৬৫ সালে সমগ্র পাকিস্তানের চলচ্চিত্র উৎসবে 'অনেক দিনের চেনা' ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কার লাভ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে 'সালেহ আহমেদ' ছদ্মনামে সংবাদ পাঠ করেন এবং নাট্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি'র আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ অনেক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। হাসান ইমাম টেলিভিশন নাট্যকার, নাট্যশিল্পী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ৩৮ বছর। বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের উপর 'পলাশী থেকে ধানমণ্ডি' নাটকের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
তার স্ত্রী লায়লা হাসান। তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার এবং আরও অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন।