হাশেম খান: বাংলাদেশের এক অসাধারণ শিল্পী ও শিক্ষাবিদ
হাশেম খান (জন্ম: ১ জুলাই, ১৯৪১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, শিক্ষাবিদ এবং সংস্কৃতি কর্মী। তিনি শুধু চিত্রকলায় অসাধারণ অবদান রাখেননি, পাঠ্যবইয়ের অলংকরণ, শিশু সাহিত্যের চিত্রকর্ম, এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায়ও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
হাশেম খানের পুরো নাম মোহাম্মদ আবুল হাশেম খান। ১৯৪১ সালের ১ জুলাই চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ ইউসুফ খান তৎকালীন কুমিল্লা জেলার একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। মাতা নূরেন্নেসা খানম গৃহিনী ছিলেন। ১৪ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
তার শিক্ষা জীবনের শুরু হয় গ্রামের মুন্সিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরে ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং চাঁদপুরের হাসান আলী হাই স্কুলে পড়াশোনা করে ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। চারুকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) ভর্তি হতে অনুপ্রাণিত করে। ১৯৬১ সালে চিত্রকলায় প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত এশিয়া ফাউন্ডেশনের বৃত্তিতে মৃৎশিল্পে গবেষণা করেন। ১৯৭৯ সালে জাপানের টোকিওতে শিশু পুস্তক চিত্রাঙ্কণে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রাচ্যকলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত তিনি দীর্ঘ ৪৪ বছর এই বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধান গ্রন্থের অলংকরণের প্রধান শিল্পী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সমকালীন শিল্পকলার প্রদর্শনী কোলকাতা, দিল্লি এবং বোম্বাইয়ে করেছেন। আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষ ১৯৭৯ উপলক্ষে জাপান এবং ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৮৭ ও ১৯৮৯ সালে টোকিও ও চেকোস্লোভাকিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতা স্তম্ভ, জাতীয় চিত্রশালা, জাতীয় নাট্যশালা, জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র, ঢাকা নগর জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের অলংকরণ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে চারুকলা ও ললিতকলা বিষয়ক পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক ৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
সম্মান ও পুরস্কার:
তার অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ১৯৯২ সালে একুশে পদক এবং ২০১১ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। তিনি আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।
উপসংহার:
হাশেম খান বাংলাদেশের চারুকলার ইতিহাসে একজন অমূল্য সম্পদ। তার শিল্পকর্ম এবং শিক্ষাবিদ্যার অবদান বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করেছে।