হাবিবর রহমান নামের ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এই নামটি একাধিক ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত। তাই, স্পষ্টতার জন্য, প্রতিটি হাবিবর রহমান-এর তথ্য আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হলো।
১। মো. হাবিবর রহমান (জন্ম: ৩১ জানুয়ারী ১৯৪৫): একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং বগুড়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার জালশুকা গ্রামে। বাবার নাম মোজাহার আলী আকন্দ। ধুনট হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে এসএসসি এবং ১৯৬২ সালে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি একজন ভালো ক্রীড়াবিদ ছিলেন এবং ব্লু প্রাপ্ত হন। পড়াশোনা শেষ করে পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন এবং অবসর গ্রহণের পর কৃষি ভিত্তিক ব্যবসায় জড়িত থাকেন। রাজনীতিতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং তৃতীয়বারের জন্য সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (১৯২৩-১৯৭১): একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯২৩ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার বালিয়াধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে দত্তপাড়া হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৪০ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই.এস-সি পাস করেন। ১৯৪৩ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে বি.এস-সি অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এম.এস-সি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সালে ঢাকা কলেজে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান এবং ১৯৫৩ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে ট্রাইপজ ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজেও কিছুদিন অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৫৮ সালে রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬২ সালে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাকে হত্যা করে।
৩। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (৩ ডিসেম্বর ১৯২৮ - ১১ জানুয়ারী ২০১৪): বাংলাদেশের ৭ম প্রধান বিচারপতি এবং পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, ভাষা সৈনিক ও অভিধান প্রণেতা ছিলেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যথা-শব্দ, মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ, প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে ইত্যাদি। ১৯২৮ সালের ৩ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বি.এ. ও এম.এ. এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে বি.এ. ও এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের রিডার ও আইন বিভাগের ডিন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে আইন ব্যবসায়ে যোগদান করেন এবং ঢাকা হাইকোর্ট বারে যুক্ত হন। তিনি সহকারী এডভোকেট জেনারেল (১৯৬৯), হাইকোর্ট বার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৭২) এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত হাইকোর্টের বিচারপতি, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং ১৯৯৫ সালে প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।