ইসলামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ হল হাদিস। আরবি শব্দ ‘হাদিস’ (حديث) এর আক্ষরিক অর্থ ‘কথা’, ‘বক্তৃতা’ বা ‘ঐতিহ্য’। ইসলামে হাদিস বলতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ এবং নীরব অনুমোদনকে বোঝায়, যা নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের শৃঙ্খলের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাদিস কুরআনের ব্যাখ্যা ও পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। কুরআনে মুসলিমদের মুহাম্মদ (সাঃ) কে অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে হাদিস ইসলামি আইনশাস্ত্রের চারটি উৎসের একটি হিসেবে গণ্য হয় (অন্যান্য তিনটি হল: কুরআন, ইজমা ও কিয়াস)।
হাদিসের উৎস হিসেবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় সাহাবীগণ তাঁর কথা, কাজ ও অনুমোদন স্মরণ রাখতেন এবং কিছু কিছু লিখেও রাখতেন। নবীর মৃত্যুর পর হাদিস সংকলনের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়। উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয হাদিস সংগ্রহের জন্য একটি ফরমান জারী করেন। ইমাম মালিকের ‘মুয়াত্তা’, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের ‘মাসনাদ’ প্রভৃতি গ্রন্থে হাদিস সংকলিত হয়। হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ, ইমাম তিরমিজী, ইমাম নাসাঈ, এবং ইমাম ইবনে মাজাহ ছয়টি গ্রন্থ (‘সিহাহ সিত্তাহ’) লিখে ইসলামী হাদিসের সংকলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
হাদিসের প্রমাণীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি হাদিসের দুটি অংশ রয়েছে: ‘সনদ’ (বর্ণনাকারীদের শৃঙ্খল) ও ‘মতন’ (হাদিসের মূল পাঠ)। হাদিসের বিশুদ্ধতার উপর ভিত্তি করে সহিহ, হাসান ও যয়িফ শ্রেণীবিভাগ করা হয়। সুন্নি ও শিয়া মতবাদে হাদিসের ব্যাখ্যা ও গ্রহণে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শিয়া মতবাদে আহল আল-বাইতের কথা ও কাজ ও হাদিসের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিছু মুসলমান শুধুমাত্র কুরআনের উপর নির্ভর করে, হাদিসের কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে, অধিকাংশ মুসলিম হাদিসের গুরুত্ব স্বীকার করে। হাদিসের সঠিকতা যাচাই করার জন্যে ইসলামে বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। হাদিসের সনদ, বর্ণনাকারীদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের উপস্থিতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে হাদিসের প্রামাণিকতা নির্ধারণ করা হয়। ইসলামের বিভিন্ন মতবাদে হাদিস গ্রহণ এবং তার ব্যাখ্যার ভিন্নতা রয়েছে।
আধুনিক কালে অনেকে হাদিস অধ্যয়ন এবং গবেষণা করে চলেছেন। অমুসলিম গবেষকেরাও হাদিস অধ্যয়নে যোগদান করে এসেছেন। হাদিস ইসলামের আইন, নীতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বোঝার জন্য অপরিহার্য। ইসলাম ধর্মে হাদিসের স্থান ও গুরুত্ব অপরিসীম।