স্বীকারোক্তি: ভারতীয় সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী আলোচনা
স্বীকারোক্তি (Confession) হল এমন একধরনের স্বীকৃতি বা বক্তব্য যার মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের অপরাধ কবুল করে। ভারতীয় সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ (Indian Evidence Act - 1872) স্বীকারোক্তির সংজ্ঞা না দিলেও এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। আইনের ২৪-৩০ ধারা অনুযায়ী, স্বীকারোক্তি ফৌজদারি মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়।
স্বীকারোক্তির প্রকার:
১) বিচারিক স্বীকারোক্তি (Judicial confession): ফৌজদারি আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে প্রদত্ত স্বীকারোক্তি।
২) বিচারবহির্ভূত স্বীকারোক্তি (Extra judicial confession): ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের বাইরে প্রদত্ত স্বীকারোক্তি।
ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের প্রাসঙ্গিক ধারা:
- ধারা ২৪: প্রলোভন, হুমকি, প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদায়কৃত স্বীকারোক্তি আদালতে অপ্রাসঙ্গিক হবে, যদি আদালত মনে করে তা দ্বারা স্বীকারকারী কোন সুবিধা লাভ করেছে অথবা কোন অসুবিধা এড়িয়ে গেছে।
- ধারা ২৫: পুলিশের কাছে প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।
- ধারা ২৬: পুলিশের হেফাজতে থাকা ব্যক্তির স্বীকারোক্তি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়, যদি না তা কোন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে প্রদত্ত হয়।
- ধারা ২৭: পুলিশের কাছে অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি থেকে পাওয়া তথ্য যদি সত্য হয়, তবে আদালতে গ্রহণযোগ্য।
- ধারা ২৮: প্রলোভন, হুমকি, প্রতিশ্রুতির প্রভাব দূর হওয়ার পর প্রাপ্ত স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে।
- ধারা ২৯: গোপন রাখার প্রতিশ্রুতি থাকলেও প্রাসঙ্গিক স্বীকারোক্তি অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
- ধারা ৩০: স্বীকারকারী ও একই অপরাধে অভিযুক্ত বিচারাধীন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে এমন প্রমাণিত স্বীকারোক্তি আদালতে বিবেচ্য হতে পারে।
বিচারবহির্ভূত স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য: বিচারবহির্ভূত স্বীকারোক্তি যদি সন্দেহাতীতভাবে সত্য ও স্বেচ্ছায় প্রদত্ত হয়, তবে তা আদালতে একটি মূল্যবান প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে এটি অবশ্যই স্বেচ্ছায় প্রদানকৃত হতে হবে এবং কোন প্রকার প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টি যাচাই করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য: এই নিবন্ধে স্বীকারোক্তির বিষয়টি ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের আলোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন আইন ব্যবস্থায় স্বীকারোক্তির প্রকৃতি ও প্রাসঙ্গিকতা ভিন্ন হতে পারে।