সোনা: ঐতিহ্য, ইতিহাস ও রহস্য
সোনা, হলুদ বর্ণের মূল্যবান ধাতু, মানব সভ্যতার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রাচীনকাল থেকেই এর অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য, চকচকে আভা এবং বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের সুবিধার জন্য এটি অত্যন্ত মূল্যবান। নবপ্রস্তর যুগ থেকেই সোনার তৈরি দ্রব্যাদি ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। জার্মান সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্ক্সও সোনাকে মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ধাতু হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রাসায়নিক নাম Aurum (লাতিন aurora থেকে উৎপত্তি), সোনা এর আকর্ষণ শুধু অর্থনৈতিক নয়। এটি ধর্ম, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সোনা অধিকারের লক্ষ্যে যুদ্ধ, রক্তপাত এবং অগণিত মানুষের প্রাণহানির ইতিহাসও রয়েছে। আবার, সোনার মালিক হলেও শান্তি পাওয়া কঠিন, কারণ সোনা হারানোর ভয় সবসময়ই থাকে।
প্রাচীন মিশর, চীন, ভারত, মেসোপটেমিয়া, গ্রীস, আর্মেনিয়া, নুবিয়া - সর্বত্রই সোনার ব্যবহার ছিল। মিশরীয় পিরামিডে প্রচুর সোনার অলঙ্কার ও জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। চতুর্থ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত কিমিয়াবিদরা 'পরশ পাথর' অনুসন্ধানে সোনার গবেষণা করেছেন। তাদের বিশ্বাস ছিল পরশ পাথরের মাধ্যমে অন্যান্য ধাতুকে সোনায় রূপান্তর করা সম্ভব। মিশরীয়রা সোনা নিষ্কাষণের গুপ্তবিদ্যায় দক্ষ ছিল।
স্প্যানিশরা দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা বিজয়ের পর ইনকা সভ্যতার অভাবনীয় সোনার সম্পদ দেখে অভিভূত হয়। ইনকারা সোনাকে সূর্য দেবতার ধাতু হিসেবে মূল্য দিত। ইনকা নেতা আটাওয়ালপাকে বন্দী করে স্পেনীয়রা মুক্তিপণ হিসেবে ৬০ ঘনমিটার সোনা চেয়েছিল, কিন্তু তাকে হত্যা করে। ইনকারা লুকিয়ে রাখা বিপুল সোনা পরবর্তীতে স্প্যানিশদের হাতে চলে যায়।
রাশিয়া ১৬০০ সাল থেকে সোনা উত্তোলন শুরু করে, ১৯০০ সালের পর থেকে উত্তোলনের পরিমাণ বহুগুণ বেড়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে সোনার কণা ঝরে পড়ে, এবং পৃথিবীর সোনাও সেখান থেকে এসেছে। নিউট্রন তারা সংঘর্ষ (কিলোনোভা) এসব ভারী ধাতুর উৎস।
গৌড়ের বড় সোনা মসজিদ ও ছোট সোনা মসজিদ সুলতানি স্থাপত্যের চমৎকার দৃষ্টান্ত। বড় সোনা মসজিদের নির্মাতা নিশ্চিত নয়, তবে আলাউদ্দীন হোসেন শাহের রাজত্বকালে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ছোট সোনা মসজিদ মজলিস-ই-মাজালিস ও অন্যদের কর্তৃক নির্মিত।