সোনামসজিদ

আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম

ছোট সোনামসজিদ: বাংলাদেশের ঐতিহ্যের এক সাক্ষী

বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ছোট সোনামসজিদ মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৫শ শতকের দিকে সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রিস্টাব্দ) ওয়ালি মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের মাঝের দরজার উপরের শিলালিপি থেকে এই তথ্য জানা যায়। শিলালিপির কিছু অংশ মুছে যাওয়ায় নির্মাণের সঠিক তারিখ নিশ্চিত করা যায়নি।

ঐতিহাসিক গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এর অবস্থান। এই মসজিদটি ‘সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন’ হিসেবে পরিচিত। এর বাইরের দিকে একসময় সোনালী রঙের আস্তরণ ছিল বলে ধারণা করা হয়; সূর্যের আলো পড়লে এ রং সোনার মতো ঝলমল করত, যার জন্য এর নাম সোনামসজিদ। গৌড় নগরীতে আরেকটি বড় সোনামসজিদ ছিল, যা সুলতান নুসরত শাহ তৈরি করেছিলেন। আকারে ছোট হওয়ায় এটিকে 'ছোট সোনামসজিদ' বলা হয়।

স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য:

মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। উচ্চতা ২০ ফুট। দেয়াল প্রায় ৬ ফুট পুরু। ইটের দেওয়াল পাথর দিয়ে ঢাকা। চারকোণে চারটি অষ্টকোণাকার বুরুজ আছে, যার উপর বলয়ের কাজ রয়েছে। পূর্ব দেওয়ালে পাঁচটি খিলানযুক্ত দরজা, উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে তিনটি করে দরজা আছে। উত্তর দেওয়ালের সর্ব-পশ্চিম দরজাটি সিঁড়ির জন্য ব্যবহৃত হতো, যা দোতলায় একটি বিশেষ কামরায় যায়। এই কামরাকে জেনানা-মহল বা বাদশাহ্‌-কা-তাখত্‌ বলে ধারণা করা হয়।

অভ্যন্তরভাগে কালো ব্যাসাল্টের ৮টি স্তম্ভ উত্তর-দক্ষিণে তিনটি আইল ও পূর্ব-পশ্চিমে পাঁচটি সারিতে বিভক্ত। পূর্ব দেয়ালে পাঁচটি মিহরাব, যার মাঝেরটি বড়। স্তম্ভ ও দেয়ালের উপর ১৫টি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে তিনটি বাংলা চৌচালা গম্বুজ। অলংকরণে পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইল ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে পাথর খোদাইয়ের কাজ বেশি।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বর্তমান অবস্থা:

৫০০ বছরের ইতিহাস বহনকারী এই মসজিদটি বাংলাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের গৌরবময় অতীতের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এর প্রাঙ্গণে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হকের কবর রয়েছে। ভূমিকম্প ও সময়ের ক্ষয়ক্ষতির পর সংস্কার করা হলেও, কিছু কিছু ক্ষতি এখনও দৃশ্যমান।

পর্যটন:

প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি দেখতে আসেন। রাজশাহী থেকে মহাসড়ক এবং সোনামসজিদ স্থলবন্দর সড়ক ব্যবহার করে এখানে পৌঁছানো যায়। যাতায়াত, থাকা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা আরও উন্নত হলে পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত
  • ১৫শ শতকে নির্মিত
  • সুলতানি স্থাপত্যের উজ্জ্বল নিদর্শন
  • মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের কবর রয়েছে
  • দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সোনামসজিদ

30/12/2024

সোনামসজিদ স্থলবন্দর মহাসড়কের কয়লাবাড়ী কেন্দ্রীয় ট্রাকস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।