সৈয়দ হাসান ইমাম: একজন অভিনেতা, আবৃত্তিকার, পরিচালক, এবং মুক্তিযোদ্ধা
সৈয়দ হাসান ইমাম (জন্ম: ২৯ জুলাই, ১৯৩৫) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অভিনেতা, আবৃত্তিকার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন পরিচালক এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বৈরাচার-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন:
তার জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। ছেলেবেলা পশ্চিমবঙ্গেই কাটে। তার পিতা সৈয়দ সোলেমান আলী ছিলেন আয়কর কর্মকর্তা। হাসান ইমাম মাত্র দুই বছর বয়সে পিতাকে হারান। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটে এবং মাতৃনিবাস বর্ধমানে। শিক্ষাজীবনের শুরু বর্ধমান টাউন স্কুলে। পরে রাজ কলেজ এবং টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন এবং দর্শনার চিনিকলে ও পরে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে চাকরি করেন। ছাত্রজীবনে ১৯৫২ সালে অল ইন্ডিয়া ইয়ুথ ফেস্টিভালে রবীন্দ্র সংগীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
শিল্পকর্ম:
১৯৬০ সাল থেকে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেন। চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক পরিচালনা করেছেন। ‘রাজা এলো শহরে’, ‘শীত বিকেল’, ‘জানাজানি’, ‘ধারাপাত’ তার উল্লেখযোগ্য কিছু চলচ্চিত্র। ১৯৬৫ সালে ‘অনেক দিনের চেনা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সমগ্র পাকিস্তানের চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান। বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নাটকে অংশগ্রহণ করেছেন। মুস্তাফা মনোয়ার নির্দেশিত শেক্সপিয়ারের ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’, রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ তার উল্লেখযোগ্য কিছু টেলিভিশন নাটক। মুক্তিযুদ্ধের আগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের মঞ্চে নাটক-নাটিকা ও গণসংগীত পরিচালনা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারীতে বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের আহ্বায়ক হিসেবে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ৮ মার্চ থেকে বেতার-টেলিভিশনের দায়িত্ব বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান সরকার। ২৫ মার্চের পর মুজিবনগরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নাট্য বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ‘সালেহ আহমেদ’ ছদ্মনামে সংবাদ পাঠ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র দলিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা:
সৈয়দ হাসান ইমাম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।