সুশীল রায় (২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৬ - ১৮ জুন, ২০১৪) ভারতের একজন বিশিষ্ট মাওবাদী নেতা এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) এর পলিটব্যুরো সদস্য ছিলেন। মাওবাদী আন্দোলনে তিনি 'সোম' বা 'অশোকদা' নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী দীনেশ গুপ্তের ভাইপো ছিলেন।
১৯৬৩ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন এবং কলকাতার বাঁশদ্রোণী এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৪ সালে সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের পর তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) -তে যোগদান করেন। তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা এবং ১৯৬৬ সালের খাদ্য আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, যার জন্য তাকে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ১৯৬৭ সালে নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে তিনি সিপিআই(এম) ছেড়ে নকশালপন্থী রাজনীতিতে যোগদান করেন।
১৯৮০ সালে তিনি মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি) এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ সময় বিহারে এমসিসি'র সংগঠন গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) (জনযুদ্ধ) এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টারের ঐক্য সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ঐক্যবদ্ধ দল, সিপিআই (মাওবাদী) এর পলিটব্যুরো সদস্য হন। তিনি দলের প্রবীণতম ও তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০০৫ সালে হুগলী জেলার কোন্নগর হিন্দমোটর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠানো হয়। পরে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর একই বছর ঝাড়খণ্ড পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে রাঁচিতে নিয়ে যায়। তার মুক্তির দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন এবং বুদ্ধিজীবীরা সরব হন। দীর্ঘদিন বন্দী থাকার পর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ২০১২ সালে ঝাড়খণ্ড উচ্চ আদালত তাকে জামিনে মুক্ত করে।
সুশীল রায় বয়স ও ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। ২০১৪ সালের ১৮ জুন ৭৮ বছর বয়সে দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স (এআইআইএমএস)-এ মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মরদেহ এইমসে দান করা হয়। তার মৃত্যুর পর তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'আমার স্মৃতিকথা' বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়।