সুলতানা রাজিয়া: ভারতের প্রথম মুসলিম নারী শাসক
সুলতানা রাজিয়া (ছ. ১২০৫ - ১৫ অক্টোবর ১২৪০) দিল্লি সালতানাতের একজন শক্তিশালী ও বিতর্কিত শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন দিল্লি সালতানাতের প্রথম এবং একমাত্র মুসলিম নারী শাসক। তাঁর পুরো নাম ছিল রাজিয়াত-উদ-দুনিয়া ওয়া উদ্দিন। তাঁর পিতা ছিলেন সুলতান ইলতুৎমিশ, যিনি মামলুক বংশের একজন শক্তিশালী সুলতান ছিলেন।
রাজিয়ার জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
রাজিয়া ১২০৫ সালে দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা ছিলেন কুতুব বেগম, কুতুবুদ্দিন আইবাকের কন্যা। রাজিয়া ছিলেন ইলতুৎমিশের জ্যেষ্ঠ কন্যা এবং বুদ্ধিমতী ও যুদ্ধবিদ্যায় পটু ছিলেন। ইলতুৎমিশের বড় ছেলের মৃত্যুর পর তিনি তাঁর কন্যাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেন।
সিংহাসনে আরোহণ:
১২৩৬ সালে ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রোকনুদ্দিন ফিরোজ ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু রোকনুদ্দিন অযোগ্য ও অলস ছিলেন। ফলে রাজ্যে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লির জনগণের সহায়তায় রাজিয়া তাঁর ভাইকে ক্ষমতাচ্যুত করে ১২৩৬ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
শাসনকাল:
রাজিয়ার শাসনকাল ছিল বিতর্কিত। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক ও সেনাপতি ছিলেন। যুদ্ধে তিনি পুরুষদের মতো সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। তাঁর নারীত্ব উপেক্ষা করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তিনি পুরুষের পোশাক পরতেন, পর্দা প্রথা মানতেন না। তিনি তাঁর সরকারি মুদ্রায় 'সুলতান' খেতাব ব্যবহার করতেন। তার শাসনকালে প্রাদেশিক শাসকদের মতামত উপেক্ষা করা হয়, যা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সৃষ্টি করে।
তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন ইয়াকুত নামক একজন ইথিওপিয়ান দাসের প্রতি অত্যধিক আস্থা রাখা, এবং তুর্কি আমিরদের উপেক্ষা করা, তাঁর পতনের অন্যতম কারণ।
পতন ও মৃত্যু:
রাজিয়ার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের ফলে ১২৪০ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি বিদ্রোহীদের একজনকে, ইখতিয়ারউদ্দীন আলতুনিয়াকে বিয়ে করে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। পালানোর সময় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ ও স্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
উত্তরাধিকার:
রাজিয়া দিল্লি সালতানাতের ইতিহাসে অনন্য এক নারী শাসক ছিলেন। তাঁর শাসনকাল সংক্ষিপ্ত হলেও তাঁর দক্ষতা ও সাহসিকতার কথা ইতিহাসে স্মরণীয়। তাঁর জীবন ও শাসনকাল নিয়ে বিভিন্ন বই ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।