সুমন সরকার: একজন সফল চিত্রগ্রাহকের উত্থান
সুমন সরকার নামটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জগতে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। একজন প্রতিভাবান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তিনি নিজের অসাধারণ দক্ষতা ও ক্যামেরার সাহায্যে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। তার জীবনের যাত্রা খুলনা থেকে শুরু হয়ে ঢাকা শহরে এসে সফলতার শিখরে পৌঁছেছে। এই লেখায় আমরা সুমন সরকারের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তার পেশাগত সাফল্য ও কর্মজীবনের আলোচনা করব।
খুলনা থেকে ঢাকা:
খুলনায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা সুমন সরকার, জেলা স্কুল ও সুন্দরবন কলেজের শিক্ষা সম্পন্ন করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এই সময়ে ইউটিউবে জনপ্রিয় গানের দল ‘দ্য রেহমান ডুয়ো’র রুসলান রহমান (সুপ্ত) তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন।
সংগ্রাম ও সাফল্যের পথ:
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা শেষ করে ঢাকায় এসে সুমন সরকার বাস্তবতার মুখোমুখি হন। চাকরির চাপে একটা আইটি কোম্পানিতে চাকরি করলেও তার মন ছিল চলচ্চিত্র নির্মাণে। তানভীর মোকাম্মেলের বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র কোর্স করেন এবং ফেসবুকে নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের সন্ধান করেন। দীপংকর দীপনের টিমে চতুর্থ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
অমিতাভ রেজার প্রভাব:
২০১৩ সালে একটি মুঠোফোন কোম্পানির স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় ‘সিন্স উই সেপারেটেড’ শীর্ষক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রথম পুরষ্কার জেতে। এই প্রতিযোগিতার জুরিবোর্ডে অমিতাভ রেজা থাকার ফলে তিনি সুমন সরকারের সাথে যুক্ত হন। অমিতাভ রেজার সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য গবেষণায় সহযোগিতা করেন এবং পরে অমিতাভ রেজার টিভি ফিকশনের সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
জাতীয় পুরস্কার ও কর্মজীবন:
২০১৯ সালে ‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। পরে ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ চলচ্চিত্রের জন্য দ্বিতীয়বারের জন্য এই পুরষ্কার পান। ‘সুড়ঙ্গ’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘ক্যাফে ডিজায়ার’, ‘দামাল’, ‘ঊনলৌকিক’ সহ অনেক আলোচিত চলচ্চিত্র ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য তিনি কাজ করেছেন। তিনি চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, যেমন ‘ন ডরাই’ চলচ্চিত্রের পানিতে চিত্রগ্রহণ ও ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রের মাটির নিচে চিত্রগ্রহণ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
সুমন সরকারের সামনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও ওটিটি প্রকল্প আছে। ‘সুড়ঙ্গ’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি কলকাতার কয়েকটি চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চিত্রনাট্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেই তিনি কাজ করেন। বর্তমান প্রজন্মের দর্শকদের সিনেমার কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করা তাকে খুব আশাবাদী করে।
উপসংহার:
সুমন সরকার একজন প্রতিভাবান চিত্রগ্রাহক যিনি নিজের কঠোর পরিশ্রম এবং অদম্য উৎসাহের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছেন। তার কর্মজীবন দর্শকদের কাছে একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে।