সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল: জেলার ২৫ লাখ মানুষের প্রাণকেন্দ্র, চ্যালেঞ্জ ও আশা
সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল, জেলার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের জন্য চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল। ২০০৯ সালে ১০০ শয্যা থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালটি আধুনিকায়নের নানা উদ্যোগের পরও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ডাক্তার, নার্স, ওষুধ ও জনবল সংকটের কারণে রোগীরা যথাযথ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জনবল সংকট:
৬৬ জন ডাক্তারের পদের মধ্যে মাত্র ৩১ জন কর্মরত। মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স ও শিশু বিভাগে ৬ জন ডাক্তারের বিপরীতে ৩৫টি পদ শূন্য। সার্জারি, গাইনি, নাক-কান-গলা বিভাগে দুইটি করে পদ থাকলেও কেবলমাত্র একজন করে ডাক্তার কর্মরত। মেডিকেল অফিসারের ৩২টি পদের মধ্যে ১৬টি পদ শূন্য। নার্সিং কর্মীর ২৫৪টি পদের মধ্যে ২০০ জন কর্মরত রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মীদেরও তীব্র সংকট বিরাজ করছে।
আইসিইউ'র অব্যবহৃত অবস্থা:
প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দশ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক আইসিইউ ইউনিটটি জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। এই ইউনিট চালু করতে তিনজন চিকিৎসক ও তিনজন অ্যানেসথেটিস্টসহ আরও সহায়ক কর্মীর প্রয়োজন। ফলে জরুরী রোগীদের সিলেটে পাঠাতে হচ্ছে।
অন্যান্য সমস্যা:
এক্সরে মেশিন বিকল থাকায় এক্সরে পরীক্ষা বন্ধ। শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তির কারণে চিকিৎসা সেবায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নার্সিং সেবার অভাবও রয়েছে। অনেক রোগীর অভিযোগ, নার্সরা যথাযথ সাড়া দিচ্ছেন না। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে।
রোগীদের অভিযোগ:
অনেক রোগী সিলেটে রেফার হচ্ছে, যা অতিরিক্ত অর্থনৈতিক বোঝা ও দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিছু রোগীর অভিযোগ, নার্সদের দায়িত্বহীন আচরণের শিকার হচ্ছেন তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য:
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জনবল সংকটের কথা স্বীকার করেছেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদাপত্র পাঠানোর কথা জানিয়েছেন। তারা ভালো সেবা প্রদানের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
উপসংহার:
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবায় জনবল সংকট দূর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। রোগীদের যাতে যথাযথ চিকিৎসা প্রাপ্ত হয় এর জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরী। এটি শুধুমাত্র একটি হাসপাতাল নয়, এটি সুনামগঞ্জবাসীর আশার একটি প্রাণকেন্দ্র।