আমিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের কৃষি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানের অগ্রদূত
ডঃ আমিরুল ইসলাম (১৯১৮-২০০১) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ যিনি কৃষি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
পিএইচডি ডিগ্রি লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবপ্রতিষ্ঠিত মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি রসায়নবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে মৃত্তিকা জরিপ অধিদপ্তরে যোগদান করে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি তৎকালীন সরকারের কৃষি বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রথম পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
ডঃ আমিরুল ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এর মৃত্তিকার প্রথম প্রযুক্তিগত শ্রেণিবিন্যাস, যা 'সেভেন সয়েল ট্র্যাক্ট' নামে পরিচিত। এই শ্রেণিবিন্যাস বাংলাদেশের মৃত্তিকা গবেষণার ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। তিনি কৃষিক্ষেত্রে সার প্রয়োগের ফলাফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সার নির্দেশিকার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি)-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে ধান গবেষণার একটি উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। উচ্চ ফলনশীল ধানের উদ্ভাবনে তার অবদান অপরিসীম।
১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের নির্বাহী সহ-সভাপতি হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পরও তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে যান। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) তাঁকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করে। বিরির গবেষণাগারের নামকরণ করা হয় ‘আমিরুল ইসলাম গবেষণাগার’। তিনি বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দা অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর সদস্য ছিলেন এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো ছিলেন। ২০০১ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু হয়।