সুতানুটি

কলকাতার উত্থানের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত একটি ঐতিহাসিক গ্রামের নাম সুতানুটি। পশ্চিমবঙ্গের এই অধুনালুপ্ত গ্রামটি আজকের উত্তর কলকাতার বাগবাজার, শ্যামবাজার ও আশেপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে সুতানুটি, কলিকাতা ও গোবিন্দপুর - এই তিনটি গ্রাম একত্রিত হয়ে আধুনিক কলকাতা শহরের জন্ম দেয়।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসক জব চার্নক, যাঁকে ইংরেজি ঐতিহাসিকরা ‘কলকাতার জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তিনি ১৬৯০ সালের ২৪শে আগস্ট সুতানুটিতে পদার্পণ করেন। স্থানীয় নিরাপত্তা ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে তিনি এই স্থানটিকে বসতি স্থাপনের উপযুক্ত মনে করেছিলেন। পশ্চিমে হুগলি নদী এবং পূর্বে ও দক্ষিণে দুর্গম জলাভূমির দ্বারা বেষ্টিত থাকায় সুতানুটি সুরক্ষিত ছিল।

সুতানুটি, ডিহি কলিকাতা ও গোবিন্দপুর ছিল মুঘল সম্রাটের খাসমহল। ১৬৯৮ সালের ১০ই নভেম্বর জব চার্নকের উত্তরসূরি চার্লস আয়ার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের কাছ থেকে এই তিনটি গ্রামের জমিদারির অধিকার কিনে নেন। এই ঘটনাই কলকাতার দ্রুত বিকাশের সূচনা করে।

সুতানুটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। শেঠ ও বসাক পরিবার ছিল এখানকার প্রভাবশালী বণিক পরিবার। জনার্দন শেঠ ও শোভারাম বসাক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জন করেছিলেন।

কলকাতার বিকাশের সাথে সাথে সুতানুটি ধীরে ধীরে কলকাতা শহরের সাথে একীভূত হয়ে যায়। বর্তমানে সুতানুটির নাম কেবলমাত্র ঐতিহাসিক গ্রন্থ ও দলিলেই উল্লেখিত হয়। তবে কলকাতা মেট্রোর শোভাবাজার স্টেশনটির নামকরণ “শোভাবাজার-সুতানুটি” রাখার মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক গ্রামের স্মৃতি জীবন্ত রাখা হয়েছে। আজও সুতানুটি কলকাতার ইতিহাসের অনুসন্ধানীদের কাছে গভীর আগ্রহের বিষয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • সুতানুটি ছিল কলকাতার তিনটি প্রাচীন গ্রামের একটি।
  • জব চার্নক ১৬৯০ সালে সুতানুটিতে পদার্পণ করেন।
  • শেঠ ও বসাক পরিবার ছিল সুতানুটির প্রভাবশালী বণিক পরিবার।
  • কলকাতার বিকাশের সাথে সাথে সুতানুটি কলকাতার সাথে একীভূত হয়ে যায়।
  • শোভাবাজার-সুতানুটি মেট্রো স্টেশন সুতানুটির স্মৃতি ধারণ করে আছে।