সুকান্ত বসাক

আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০৩ পিএম

সুকান্ত ভট্টাচার্য: বিদ্রোহী কবি ও মানবতার কণ্ঠস্বর

সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৯২৬-১৯৪৭) বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যিনি কবিতা ও সাহিত্যের মাধ্যমে তার যুগের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেছিলেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে মারা যাওয়া সত্ত্বেও তার সাহিত্যে শক্তিশালী বক্তব্য, সমাজের প্রতি দায়িত্ব এবং মানবতার জন্য তার তীব্র ভালোবাসা আজও তাকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায়। তাঁর বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য এবং মা সুনীতি দেবী ছিলেন বুদ্ধিজীবী মননের মানুষ। ছাত্রজীবন থেকেই সুকান্ত পড়াশোনায় খুব মেধাবী ছিলেন, তবে খুব ছোট বয়সেই তিনি সাহিত্যের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সেই সময় থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন।

সুকান্তের কবিতা মূলত সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের জীবনসংগ্রাম, হতাশা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং তাদের অধিকারের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। তার অন্যতম জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ “ছাড়পত্র”, যেখানে তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সামাজিক অসাম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে কাব্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছেন।

১. “ছাড়পত্র” – এই কবিতায় সুকান্ত ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন, যা আজও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবিতা হিসেবে পরিচিত।

২. “অভিযান” – সুকান্তের কবিতায় বৈপ্লবিক চেতনা ও সমাজতন্ত্রের প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। “অভিযান” কবিতায় মানব মুক্তির সংগ্রাম ও সমৃদ্ধির আহ্বান করেছেন তিনি।

৩. “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়” – এই কবিতায় তিনি ক্ষুধার যন্ত্রণা এবং বেঁচে থাকার লড়াই নিয়ে লিখেছেন, যা সহজেই সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যায়।

সুকান্ত ছিলেন একজন সৎ, স্পষ্টভাষী ও আদর্শবান কবি। তার লেখায় সমাজতন্ত্র ও কমিউনিস্ট চেতনার প্রবল প্রভাব ছিল। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সাথে জড়িত ছিলেন এবং তার কবিতায় শ্রমিক-কৃষক-মজদুরদের অধিকারের দাবি উঠে এসেছে। তার লেখা ছিল শোষিত ও অবহেলিতদের কণ্ঠস্বর, যারা সামাজিক বৈষম্যের শিকার।

সুকান্তের কবিতার ভাষা ছিল সহজ, সরল এবং মাটির কাছাকাছি। তার লেখার শৈলীতে সমাজের অসাম্য, অবিচার এবং মানুষের দুর্দশা গভীরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি প্রচলিত ভাবধারার বাইরে গিয়ে সমাজের সমস্যাগুলিকে সাহসিকতার সাথে তুলে ধরেছেন, যা তাকে একজন বিদ্রোহী কবি হিসেবে খ্যাতি দিয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, সুকান্তের জীবন ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। মাত্র ২১ বছর বয়সে, ১৯৪৭ সালের ১৩ মে, তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তবে তার এই ছোট্ট জীবনে তিনি এমন কিছু কবিতা ও সাহিত্য রচনা করে গেছেন যা আজও আমাদের মনকে আলোড়িত করে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য তার কবিতা ও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে মানবতার কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করে আছেন। তার লেখায় বিদ্রোহ, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ, ও সাধারণ মানুষের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি সমাজের অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন এবং জাতির চেতনায় স্থায়ী প্রভাব রেখে গেছেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন একজন বিখ্যাত বাংলা কবি।
  • তিনি মার্ক্সবাদী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন।
  • তার কবিতায় গরিব ও শোষিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট প্রতিফলিত হয়।
  • তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে মারা যান।
  • তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘ছাড়পত্র’ অন্যতম।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সুকান্ত বসাক