বাংলাদেশে সীসা দূষণ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ সীসা দূষণে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। প্রায় ৭০% বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্ব সীসার ফলে হয়, এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি বছরে ১.৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের রক্তে গড়ে ৬-৮ মাইক্রোগ্রাম সীসা/ডেসিলিটার পাওয়া গেছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সীমা (৫ মাইক্রোগ্রাম) থেকে অনেক বেশি। যদিও সীসার কোন নিরাপদ মাত্রা নেই, যেকোনো পরিমাণ সীসাই ক্ষতিকর।
সীসা দূষণের প্রধান উৎস হল সীসার ব্যাটারি পুনঃচক্রায়ন, সীসা মিশ্রিত রঙ, হলুদে সীসা মিশ্রণ, মাটি ও ধাতুর তৈজসপত্র (সীসার প্রলেপ হিসেবে), মসলা (খাদ্য বিষ হিসেবে), ই-বর্জ্য, গয়না তৈরিতে, সোনার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, ধর্মীয় গুড়া ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ এবং আমদানি করা বাসমতি চাল। হলুদে ২-১০% পর্যন্ত সীসা পাওয়া গেছে, ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে এ পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আনুমানিক ৩ কোটি ৫৫ লাখ শিশু সীসা দূষণের শিকার। মুন্সিগঞ্জের একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২০-৪০ মাস বয়সী শিশুদের ৭৮% এর রক্তে অতিরিক্ত সীসা আছে।
সীসা দূষণের ফলে শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। সরকারি অনুমোদন ছাড়া কেউ সীসা প্রক্রিয়াজাত করতে পারে না, কিন্তু এ নিয়ম কেউ মানে না। ইউনিসেফ এবং পিওর আর্থ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্যের ভিত্তিতে সরকার এই সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যেমন বিধি তৈরি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। তবে এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে সমাধানে আরো অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আরও বিস্তারিত তথ্য উপলব্ধ হলে আমরা আপনাদের অবগত করব।