সাঁথিয়া, পাবনা

আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:০০ পিএম
নামান্তরে:
সাঁথিয়া পাবনা
সাঁথিয়া, পাবনা

সাঁথিয়া উপজেলা, পাবনা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অসাধারণ সমন্বয়

বাংলাদেশের পাবনা জেলার অন্তর্গত সাঁথিয়া উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। ৩৩১.৫৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে ফরিদপুর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা, দক্ষিণে সুজানগর, পূর্বে বেড়া এবং পশ্চিমে পাবনা সদর ও আটঘরিয়া উপজেলার সাথে সীমান্তবর্তী। এই উপজেলার নামকরণের পেছনে দুটি জনশ্রুতি প্রচলিত। একটি জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রাচীনকালে এটি চর এলাকা ছিল, যেখানে 'সিনথিয়া' নামের এক আদিবাসী বাস করতেন, যার নামানুসারে সাঁথিয়া নামকরণ হয়। অন্য জনশ্রুতি অনুযায়ী, ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই এলাকায় একা চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল; তাই সকলে সাথী নিয়ে আসতেন, যা থেকে ‘সাঁথিয়া’ নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৯ সালে সাঁথিয়া থানা প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এটিকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। সাঁথিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর, এখানকার কৃষকরা ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, শাকসবজি, সরিষা ইত্যাদি উৎপাদন করে। বড়াল ও যমুনা নদীর বাঁধ নির্মাণের ফলে এখানে বন্যার ঝুঁকি কম। কৃষিকাজে অনাবৃষ্টির সমস্যা দূর করতে ক্যানেলের মাধ্যমে যমুনা নদী থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি উপস্থিতির কারণে এখানকার জনগোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে সচেতন। সাঁথিয়ার জনসংখ্যা ৩,২৩,৯৩২ (প্রায়) এবং ঘনত্ব ৯৮৬ জন/বর্গ কিমি। এখানকার মানুষ কৃষি, হাঁস-মুরগির খামার, দুগ্ধ খামার, গরু-ছাগল পালন, তাঁতশিল্প ইত্যাদি পেশার সাথে জড়িত। 'বেঙ্গল মিট' নামক মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। এছাড়াও, পেঁয়াজ চাষের জন্য সাঁথিয়া উপজেলা সারা দেশেই পরিচিত।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাঁথিয়া উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ইতিহাস এখানে স্মৃতিরূপে অক্ষত আছে। নাগডেমরা ইউনিয়নের ধূলাউড়ি ফকির পাড়ায় নারী নির্যাতন, এবং ইছামতি নদীর তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার ঘটনা ইতিহাসে স্মরণীয়। ডাববাগান যুদ্ধ এবং সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হানাদার ক্যাম্প অপারেশন উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ। ১৫ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। নাগডেমরায় গণকবর এবং শহীদনগর ও সাঁথিয়া উপজেলা চত্বরে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

সাঁথিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন লক্ষণীয়। এখানে কলেজ, মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এবং মাদ্রাসা রয়েছে। শিক্ষার হার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও সাঁথিয়া সমৃদ্ধ। ক্লাব, লাইব্রেরি, নাট্যদল, খেলার মাঠ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিনোদনের সমৃদ্ধির ইঙ্গিত করে।

সার্বিকভাবে, সাঁথিয়া উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, এবং উন্নয়নের এক অসাধারণ সমন্বয়। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, এবং শিক্ষার দিক দিয়ে এ উপজেলা ধীরে ধীরে অগ্রগতি করছে। তবে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের আরও বিস্তারের মাধ্যমে এখানকার অধিবাসীদের জীবনমান উন্নত করা সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • পাবনা জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
  • কৃষি প্রধান অর্থনীতি
  • ১৯৮৩ সালে উপজেলায় উন্নীত
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • পেঁয়াজ চাষের জন্য বিখ্যাত
  • ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সাঁথিয়া পাবনা

২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

সাঁথিয়া-মাধপুর সড়কে ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটে।