সবুজ: রঙ, প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি
সবুজ, দৃশ্যমান বর্ণালীতে নীল ও হলুদের মধ্যবর্তী একটি রঙ, ৫২০-৫৭০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর প্রভাবে আমাদের চোখে ধরা পড়ে। এটি একটি মৌলিক রঙ, যার পরিপূরক রঙ লাল (সাধারণ বর্ণচক্রে) এবং ম্যাজেন্টা (এইচএসভি বর্ণচক্রে)। প্রকৃতিতে, উদ্ভিদের ক্লোরোফিলের কারণে সবুজ রঙের বিস্তৃতি দেখা যায়, যা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সূর্যের আলোকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করে। অনেক প্রাণী তাদের পরিবেশের সাথে মিশে থাকার জন্য সবুজ রঙ ধারণ করে। কিছু খনিজও ক্রোমিয়ামের উপস্থিতিতে সবুজ রঙ ধারণ করে।
ভাষা ও সংস্কৃতিতে সবুজ:
ইংরেজিতে 'গ্রীণ' (green) শব্দটি 'টু গ্রো' (to grow) বা বৃদ্ধি পাওয়া থেকে উৎপত্তি। সবুজ উদ্ভিদ, প্রকৃতি, নবীনতা, অপরিপক্কতা ইত্যাদি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। রবীন্দ্রনাথের কবিতায়ও সবুজের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। কিছু ভাষায়, যেমন পুরোনো চাইনিজ, থাই, জাপানি, ভিয়েতনামীতে 'নীল' ও 'সবুজ' একই শব্দ দিয়ে প্রকাশিত হয়। জাপানিতে 'মিডোরি' ও 'গুরিন' দুটি আলাদা শব্দ সবুজের জন্য ব্যবহৃত হলেও, ট্র্যাফিক লাইটে 'আও' (নীলের শব্দ) ব্যবহার করা হয়, কারণ সবুজ নীলের একটি ছায়া হিসাবে বিবেচিত হয়।
সবুজ ও পতাকা:
প্যান-আফ্রিকানিজমের রঙ হিসাবে সবুজ ব্যবহৃত হয়, আফ্রিকার বহু দেশের পতাকায় এর ব্যবহার দেখা যায়। ইসলামেও পবিত্রতা বোঝাতে সবুজ ব্যবহৃত হয়, হামাস, ইরানের পতাকায় এর প্রতীকী ব্যবহার লক্ষণীয়। আয়ারল্যান্ডের প্রতীক হিসেবে সবুজের ব্যবহার আছে। লেবাননের পতাকায় লেবানন গাছের সবুজ রঙ অবিচলতা ও সহনশীলতার প্রতীক।
ধর্ম ও পৌত্তলিকতা:
ইসলামে মুহাম্মদ (সা.)-এর পোশাক ও ব্যানার সবুজ ছিল বলে ধারণা করা হয়, এবং জান্নাতে সবুজ রেশমের পোশাকের উল্লেখ কুরআনে আছে। আল-খিদর ('সবুজ ব্যক্তি') একজন গুরুত্বপূর্ণ কোরআনিক ব্যক্তিত্ব। খ্রিস্টান ধর্মেও, লিটারজিক্যাল উদযাপনে এবং ক্রিসমাসে সবুজ ব্যবহৃত হয়। পৌত্তলিকতায় সবুজ প্রাচুর্য, বৃদ্ধি, সম্পদ, নবায়ন ও ভারসাম্যকে প্রতিনিধিত্ব করে।
সবুজ বিপ্লব:
বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, সেচ ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে যে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে 'সবুজ বিপ্লব' বলা হয়। ১৯৪৪ সালে মেক্সিকোতে ড. নরমন বোরলগের নেতৃত্বে উচ্চ ফলনশীল গমের জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এর সূচনা হয়। ১৯৭০ সালে ড. বোরলগ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। সবুজ বিপ্লবের ফলে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এতে কিছু নেতিবাচক দিকও আছে, যেমন জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, বাজারজাতকরণের সমস্যা ইত্যাদি।
সবুজ ছাতা:
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালে পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রদানের জন্য 'সবুজ ছাতা' প্রতীকের প্রচলন করে। এটি সাধারণত বেসরকারি সংস্থাগুলির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস):
এটি বাংলাদেশের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও), যা দারিদ্র্য বিমোচন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে। ১৯৬৪ সালে বগুড়ার ঠেঙ্গামারা গ্রামে দুজন ভিক্ষুক নারীর নেতৃত্বে এর সূচনা হয়।