শৈশব

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:৫১ এএম
নামান্তরে:
Childhood
শৈশব

শৈশব: একটি বিস্তারিত আলোচনা

জন্মের পর থেকে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধি কালের পূর্বের সময়টাকে শৈশব বলে। শৈশবের ধারণাটি ১৭শ থেকে ১৮শ শতাব্দীতে উদ্ভব হয়, বিশেষ করে দার্শনিক জন লক-এর শিক্ষা বিষয়ক মতবাদে। এর আগে শৈশবকালকে বড়দের অসম্পূর্ণ সংস্করণ হিসেবে দেখা হত।

পিয়াজেট থিওরী অব কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট অনুসারে শৈশবের দুটি পর্যায় আছে: প্রাক-কর্মক্ষম পর্ব এবং কর্মক্ষম পর্ব। ডেভেলপমেন্টাল সাইকোলজি অনুসারে, শৈশবকালকে হাঁটা শেখার সময়, খেলার সময়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধিকালে ভাগ করা যায়।

শৈশবের নির্দিষ্ট কোনো বয়স পরিসীমা নেই। সাধারণত জন্মের পর থেকে বয়ঃসন্ধি কাল পর্যন্ত সময়টাকে শৈশব বলে। অনেক দেশে ১৫-২১ বছরের মধ্যে একটি বয়স সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার পরে একজনকে পূর্ণবয়স্ক হিসাবে বিবেচনা করা হয়; অধিকাংশ দেশে এই বয়স ১৮ বছর।

শৈশবের গোড়ার দিকে, শিশুরা কথা বলা এবং স্বাধীনভাবে হাঁটা শুরু করে। National Association for the Education of Young Children-এর মতে, শৈশবের প্রাথমিক পর্যায় ৮ বছর বয়স পর্যন্ত। এই পর্যায়ে, শিশুরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জিনিস শিখে। বড়রা তাদের উন্নয়নে পরামর্শ এবং সাহায্য করে, ফলে শিশু ও বড়দের মধ্যে মায়ার বন্ধন গড়ে ওঠে।

সাত থেকে আট বছর বয়সে শৈশবের মধ্যবর্তী পর্যায় শুরু হয় এবং বয়ঃসন্ধির পূর্ব মুহূর্তে শেষ হয়। এই সময় শিশুরা স্কুলে যাওয়া শুরু করে, মানসিক ও সামাজিকভাবে উন্নতি লাভ করে, নতুন বন্ধু ও দক্ষতা অর্জন করে, এবং স্বাধীন ও স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে। বয়ঃসন্ধিকাল শৈশবকাল থেকে সম্পূর্ণ পৃথক, তবে অনেক সমাজে কৈশোরকে শৈশবের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ তারা এখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক।

ঐতিহাসিক ফিলিপ আরিস এবং কানিংহাম মনে করেন শৈশবকাল প্রাকৃতিক নয়, বরং সমাজের সৃষ্টি। ১৬০০ শতাব্দীর দিকে ইউরোপে শৈশব ধারণাটি উত্থান হয়। জন লক তার 'টেবুলা রাসা' তত্ত্বে শিশুদের মস্তিষ্ককে খালি স্লেট হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা শিশু লালন-পালনের ধারণাকে বদলে দেয়। শিল্প বিপ্লবের সময় শিশুশ্রম ব্যাপক ছিল। ১৯০০ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপে শিশুদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়।

জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ (CRC) ১৮ বছরের নিচে সকলকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করে। বর্তমানে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে আইন রয়েছে এবং শিশুদের আইনি অধিকার রক্ষা করা হয়। শিশু মৃত্যুর হার ১৯৯০-এর দশক থেকে কমেছে। তবে, দারিদ্র্যপীড়িত দেশে, যেমন বাংলাদেশে, অপুষ্টির কারণে শিশু মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।

মূল তথ্যাবলী:

  • শৈশবকাল হল জন্ম থেকে বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত সময়কাল।
  • পিয়াজেট ও অন্যান্য মনোবিজ্ঞানীরা শৈশবের বিভিন্ন পর্যায় নির্ধারণ করেছেন।
  • শৈশবে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটে।
  • ঐতিহাসিকভাবে শৈশবের ধারণাটি সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
  • শিশু অধিকার সনদ শিশুদের অধিকার সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, তবে দারিদ্র্যের কারণে এখনো উদ্বেগজনক।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।