জার্মান শেফার্ড কুকুর: এক ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও জনপ্রিয়তা
জার্মান শেফার্ড, যা ব্রিটেনে আলসেশিয়ান নামেও পরিচিত, একটি মাঝারি থেকে বড় আকারের জার্মান কর্মক্ষম কুকুরের জাত। ১৮৯৯ সালে ম্যাক্স ভন স্টেফানিট্জ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী জার্মান পালক কুকুর ব্যবহার করে এই জাতটি তৈরি করেন।
প্রাথমিকভাবে মেষ পালন ও রক্ষার জন্য উদ্ভাবিত হলেও, জার্মান শেফার্ড কুকুর পরবর্তীকালে অনেক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন- প্রতিবন্ধীদের সাহায্য, অনুসন্ধান ও উদ্ধার, পুলিশ কাজ এবং যুদ্ধ। এরা সাধারণত সঙ্গী কুকুর হিসাবেও রাখা হয় এবং ২০০৩ সালে ফেডারেশন সাইনোলজিক ইন্টারন্যাশনাল-এর তথ্য অনুযায়ী, এই জাতের বার্ষিক নিবন্ধন সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল।
জার্মান শেফার্ডের ইতিহাস:
১৮৯০ এর দশকে, কুকুরের জাতগুলিকে মানসম্মত করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। মেষ পালন ও তাদের শিকারিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে কুকুর পালন করা হতো। জার্মানির স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোতে মেষপালকরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কুকুর নির্বাচন ও পালন করত। ১৮৯১ সালে ফাইল্যাক্স সোসাইটি গঠিত হয়, জার্মানির স্থানীয় কুকুর জাতের মানসম্মত উন্নয়নের জন্য। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে তিন বছরের মধ্যেই এটি ভেঙে পড়ে।
বৃহৎ শিল্পাঞ্চলগুলিতে শিকারী প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মেষপাল কুকুরের প্রয়োজন কমে যায়। কিন্তু একই সাথে, এই কুকুরের বহুমুখী প্রতিভা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। ম্যাক্স ভন স্টেফানিটজ, একজন প্রাক্তন সেনা অফিসার এবং বার্লিন ভেটেরিনারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, ফাইল্যাক্স সোসাইটির একজন প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। তিনি কুকুরের কর্মক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। ১৮৯৯ সালে তিনি হেক্টর লিংক্সরেইন নামের একটি কুকুর দেখেন, যা তাকে আকর্ষণ করে এবং তিনি কুকুরটি কিনে নেন এবং এর নাম রাখেন হোরান্ড ভন গ্রাফরাথ। সেই বছরই তিনি 'ভেরেইন ফুর ডয়েচে শেফারহুন্ডে' (জার্মান শেফার্ড কুকুর সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।
জার্মান শেফার্ডের বৈশিষ্ট্য:
জার্মান শেফার্ড কুকুর মাঝারি থেকে বড় আকারের হয়। পুরুষদের উচ্চতা ৬০-৬৫ সেমি এবং নারীদের ৫৫-৬০ সেমি। এরা ঘণ্টায় ৩০ মাইল পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। তাদের লম্বাটে দেহ, গম্বুজাকৃতির কপাল, লম্বা চৌকো মুখ এবং কালো নাক থাকে। এদের চোখ মাঝারি আকারের এবং বাদামি রঙের হয়। এদের দ্বি-স্তরের কোট থাকে, যা ঘন এবং মোটা অন্তরস্তরের সাথে মসৃণভাবে সংযুক্ত থাকে। কোট দুই রকমের হয়: মাঝারি এবং দীর্ঘ। বেশিরভাগ জার্মান শেফার্ড কালো-ট্যান বা কালো-লাল রঙের হয়।
বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব:
জার্মান শেফার্ড কুকুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তারা দ্রুত নতুন জিনিস শিখতে পারে এবং নির্দেশনা বুঝতে পারে। তাদের উচ্চ শেখার ক্ষমতা এবং আনুগত্য তাদেরকে পুলিশি কাজ, উদ্ধারকাজ ও সেনাবাহিনীতে কাজে লাগায়। এরা আত্মবিশ্বাসী, কৌতূহলী এবং কর্মপ্রিয়। কিন্তু সঠিক সমাজিকীকরণের অভাবে তারা পরিবার ও স্থান সম্পর্কে অত্যধিক সুরক্ষামূলক হতে পারে।
স্বাস্থ্য সমস্যা:
জার্মান শেফার্ডের প্রজননের প্রথম দিকে অন্তঃপ্রজননের ফলে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। হিপ এবং কনুই ডিসপ্লেসিয়া, স্পাইনাল স্টেনোসিস, হিমোফিলিয়া, ডিজেনারেটিভ মাইলোপ্যাথি, ভন উইলব্র্যান্ডের রোগ, এবং এক্সোক্রাইন অগ্ন্যাশয় অপ্রতুলতা এরকম কিছু সাধারণ সমস্যা। তাদের গড় আয়ু প্রায় ১০ বছর।
জনপ্রিয়তা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান শেফার্ড কুকুর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ফেরত আসা সৈন্যরা এদের প্রশংসা করেন এবং রিন টিন টিন ও স্ট্রংহার্ট নামের কুকুর অভিনেতারাও এর জনপ্রিয়তা বাড়ানোয় অবদান রাখেন। যুক্তরাষ্ট্রে এরা দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় জাত।
উপসংহার:
জার্মান শেফার্ড কুকুর একটি অসাধারণ জাত, যার বুদ্ধিমত্তা, কর্মক্ষমতা এবং আনুগত্য তাদেরকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলেছে। তবে, তাদের প্রজনন ও স্বাস্থ্যের দিকগুলি সাবধানে বিবেচনা করা প্রয়োজন।